ডেস্ক রিপোর্ট: কেউ আসছেন নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে, কেউ বা নামের সংশোধন। আবার কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন ওয়েবসাইটে বা অনলাইনে আপডেট না থাকায় সেটিও করতে আসছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এমন মানুষের জটলা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। প্রায় ১৮টি সেবা পেতে এখন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কিন্তু অপ্রতুল লোক ও জটিল নিয়মের কারণে ভোগান্তির অভিযোগ করছেন সেবাগ্রহীতারা।
সরেজমিনে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন জন্মনিবন্ধনের সেবা নেওয়ার জন্য যে পরিমাণ লোকজন আসছে সে পরিমাণ জনবল না থাকায় পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না সেবাগ্রহীতারা। সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোন গঠিত। তাই ১০টি ওয়ার্ডের জনগণ একটি অফিসেই সেবা নিতে আসে। এতে হিমশিম খায় কর্মকর্তারা। নির্ধারিত ফরমে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করেও দিনের পর দিন ঘুরেও সনদ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। এছাড়া আলাদা বকশিশ না দিলেও সনদ পেতে ঘুরানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর জন্মনিবন্ধন ভুল সংশোধনীর জন্য সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস ও ডিসি অফিসে কয়েক দফা ঘুরেও সনদ না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
জানা যায়, অনেকে এক যুগ আগে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়েছিলেন, এখন ওয়েবসাইটে সেই তথ্য মিলছে না। আবার অনেকে অনলাইন সনদ নিয়েছিলেন, কিন্তু যাদের সনদ নম্বর ১৭ ডিজিটের কম, তাদের তথ্যও ওয়েবসাইটে নেই। আবার ওয়েবসাইটে কিছু জন্মনিবন্ধন পাওয়া গেলেও সেটির নামের বানান বেশির ভাগই ভুল করে উঠানো হয়েছে। আবার সেই বানান বা ছোট-খাটো সংশোধনী করতে গেলে শুরু হয় আরো ভোগান্তি। প্রথমে আঞ্চলিক অফিস পরে সেটি নিয়ে যেতে হয় ডিসি অফিসে। ছোট-খাটো ভুল সংশোধনে মানুষের যে চরম ভোগান্তি হচ্ছে, তা স্বীকার করে জনপ্রতিনিধিরাও প্রশ্ন তুলেছেন। নিবন্ধন ও সংশোধনের দায়িত্ব কেন তাদের হাতে থাকবে না? অন্যদিকে নতুন জন্মনিবন্ধনেও ভোগান্তির কথা বলছেন নাগরিকরা।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম নামে একজন অভিযোগ করেন, জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে তিনি কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। আঞ্চলিক অফিসে গেলে, তার কি কি কাগজপত্র লাগবে তাও বলেনি কেউ। উলটো তার কাছে টাকা দাবি করারও অভিযোগ করেন তিনি। সামিউল আলম নামে আরেক জন জানান, তার সন্তানের নামের বানান ভুলের কারণে তিনি অনেক বার আঞ্চলিক অফিসে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে তিনি সেটি সংশোধন করেন।
জানা যায়, ২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করাতে হবে। পাশাপাশি মৃত্যুর ৪৫ দিনের মধ্যে মৃত্যুসনদ সংগ্রহের কথা বলা হয়। শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন সরবরাহ করত। ২০০৬ সালে এসে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা শুরু হয়। ২০১১ সালের নভেম্বরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার চালু করা হয়, যার কার্যক্রম হয় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এরপর অনেকেই পুরোনো জন্ম নিবন্ধন সনদ নতুন ওয়েবসাইটে যুক্ত করে নিয়েছেন। পাশাপাশি কিছু ইউনিয়ন পরিষদ আগের হাতে লেখা সনদের তথ্য ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করে।
তবে বেশির ভাগ হালনাগাদ করা হয়নি। ২০১২ সালে চালু হওয়া ওয়েবসাইটটি ২০২০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ফের নতুন ওয়েবসাইট চালু হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা আগে জন্মনিবন্ধন করলেও সে তথ্য বা জন্মনিবন্ধনের তথ্য ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না। ফলে অনেকে শিক্ষার্থীদের স্কুলে স্কুলে বিভিন্ন নিবন্ধন কার্যক্রমে ভোগান্তিতে পড়েছেন। আবার অনেকের ওয়েবসাইটে উঠলেও সেটিতে অসংখ্য বানান ভুল রয়েছে বলেও জানান।
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, কাউন্সিলরদের অধীনে হোক আসলে এটি আমরাও চাই। আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তবে এখনো সার্ভারের গতি যদি ঠিক থাকে তাহলে সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্ভারের সমস্যার কারণে মাঝে-মধ্যে দেরি হয়। তবে কাউন্সিলরদের অধীনে দিলে এটি আরো সহজ হবে বলেও মনে করছি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বলেন, বেশির ভাগ মানুষ এখনো মনে করে কাউন্সিলর অফিস থেকে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়, যার কারণে তারা প্রথমে কাউন্সিলর অফিসে আসে। এর পরে তাদের আঞ্চলিক অফিসের কথা জানালে তারা সেখানে যায়। ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি আঞ্চলিক অফিসে সবাই ভিড় করলে এমনিতেই যে লোকবল আছে সে অনুযায়ী সেবাগ্রহীতারা সঠিক সেবা পাওয়ার কথা না। সঠিক সেবা না পাওয়ার অভিযোগ আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ডকেন্দ্রীক কাউন্সিলরের অধীনে জন্মনিবন্ধন ও সংশোধনীর বিষয়ে ব্যবস্হা করা হলে সেবা আরো সহজ হবে বলে মনে করছি।
সংশোধনে ভোগান্তির বিষয়ে জন্মনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ওসমান ভূঁইয়া বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী এ নিয়ম করা হয়েছে। কীভাবে এসব আরো সহজ করা যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলেও তিনি জানান।-ইত্তেফাক