Home সারাদেশ জনগণের বাধারমুখে ডেমরায় শহীদ মিনার ভাঙ্গার কাজ বন্ধ

জনগণের বাধারমুখে ডেমরায় শহীদ মিনার ভাঙ্গার কাজ বন্ধ

24

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর ডেমরায় স্থানীয় জনগণের বাধায় সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শহীদ মিনার ভাঙ্গার কাজ। তবে বাধা দিতে আসা লোকজন পায়ে জুতা পায়ে বেদিতে উঠা শহীদ মিনার ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করেছেন। বুধবার বেলা ১১ টার দিকে রাজধানীর প্রবেশদ্বার সুলতানা কামাল সেতু সংলগ্ন চৌরাস্তায় নির্মিত শহীদ মিনারটি ভাঙ্গা বন্ধ করে ঢাকা সড়ক বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে ডেমরার ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের কর্মচারী ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে পাটকল কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারটি ‘ডেমরা চৌরাস্তা’ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে দেয়। তারপর থেকেই ডেমরা ও যাত্রাবাড়ি থানা এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ শতাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার লক্ষাধিক শিক্ষার্থীরা এ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে আসে একুশে ফেব্রুয়ারিতে। পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহ লক্ষাধিক এলাকাবাসী প্রতিবছর ভাষা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এখানে। ইতিপূর্বে স্থানীয় প্রশাসন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন ঐতিহ্যবাহী এ শহীদ মিনারকে ঘিরে। শহীদ মিনারটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবন সংস্কৃতির একটি বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে আজও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। অথচ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তরকে অভিহিত না করেই ডেমরা যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠার তমা গ্রুপ এ শহীদ মিনার ভাঙ্গার কার্যক্রম শুরু করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, শহীদ মিনারের চারপাশের বেদীগুলো সড়ক বিভাগের বুলডোজার দিয়ে ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি শ্বেত পাথর দিয়ে তৈরি নির্মাণ ফলকটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ সংবাদ এলাকায় সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা প্রতিবাদ জানায় এবং কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম (আসাফো) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ শহীদ মিনারে ১৯৯২ সাল থেকে অমর একুশ উদযাপন করে আসছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ লাখো এলাকাবাসী। এ শহীদ মিনারটি পুনঃনির্মাণ ব্যবস্থা না করে ভাঙ্গার উদ্যোগ গ্রহণ করা জাতিসত্তার উপরে আঘাত হানার মতোই। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল মাহমুদুল হাসান পলিন বলেন, ডেমরা চৌরাস্তায় নির্মিত শহীদ মিনারটি আমাদের অত্র অঞ্চলের জীবন সংস্কৃতির একটি বিরাট অংশ। শহীদ মিনার ভাঙ্গার বিষয়ে এলাকাবাসী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শহীদ মিনারটি স্থানান্তরের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ। এ বিষয়ে ডেমরা যাত্রাবাড়ী সড়ক উন্নয়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের ম্যানেজার মো. সেলিম জানান, ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডেমরা যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ঢাকা সড়ক বিভাগ আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো। এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহাদুল্লাহ বলেন, শহীদ মিনার ভাঙ্গার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই সড়ক বিভাগ ও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে স্থান নির্ধারণ করে শহীদ মিনারটি পুণ:র্নিমাণের কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে শহীদ মিনারের সামনে স্পষ্ট বাংলায় লেখা ‘মূল বেদিতে জুতা পায়ে দিয়ে উঠা ও বসা নিষেধ’। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কেউ-ই প্রায় মানেন না। রাজধানীর প্রবেশদ্বার সুলতানা কামাল সেতু সংলগ্ন ডেমরা চৌরাস্তায় নির্মিত শহীদ মিনারটি সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এখানে চলে পরিচ্ছন্নতা অভিযান।