Home রাজনীতি গুম করা বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন: মির্জা ফখরুল

গুম করা বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন: মির্জা ফখরুল

23

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের গুম করা বর্তমান আওয়ামী সরকারের রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন। বর্তমানে সত্যভাষী মানুষের নিরাপত্তা চরম সংকটাপন্ন। দেশের মানুষের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করার জন্য গুমকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়ে এরা দেশকে এক ভীতিকর জনপদে পরিণত করেছে। অগণতান্ত্রিক সরকার বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে না এগিয়ে একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে মনুষ্যত্বহীন পন্থায় মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করাসহ অনেককেই গুম করে অদৃশ্য করে দিচ্ছে। গুম হওয়া নিয়ে সারাদেশের মানুষ গভীর শঙ্কা, ভয় ও শিহরণের মধ্যে বাস করছে। কে কখন গুম হয়ে যায় এই আশঙ্কায় দেশের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেবলমাত্র কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনে গুম করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটে। গুম মানবসভ্যতার পরিপন্থী। আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশে গুম একটি অচেনা বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ যে সমস্ত দেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের পথের কাঁটা সরানোর জন্য গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে একথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মী গুম হয়েছেন তাদের বাপ-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। গুম মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ হলেও বর্তমান আওয়ামী সরকার কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রতি এরা ভ্রুক্ষেপহীন। সবার চোখের সামনে থেকে ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গুম করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের বিষয়টি সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে নিলর্জ্জের মতো অস্বীকার করে আসছে। অথচ বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর সুষ্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই সম্ভব সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ নির্বাচিত সরকারকে জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই-অবিলম্বে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ গুম হয়ে যাওয়া অসংখ্য নেতাকর্মীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি মনে করি-ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পালিত হচ্ছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই এবং ১৬১ জনের এখনো পর্যন্ত কোন খো্জঁ পাওয়া যায়নি। যদিও, আমাদের হিসেব মতে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও তিন থেকে চার গুণ বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহবান জানাচ্ছি-তারা যেন অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে গুমের ঘটনা বন্ধ করতে এবং গুমের শিকার সকলের ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দেয় ও ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করে।”