Home সাহিত্য ও বিনোদন ‘গন্তব্য ‘ সিনেমায় গান নিয়ে আসছেন খ‍্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস পারভীন

‘গন্তব্য ‘ সিনেমায় গান নিয়ে আসছেন খ‍্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস পারভীন

43

জাকির হোসেন আজাদী: দেশের খ‍্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস পারভীন দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি দেশ বিদেশের সবার কাছে প্রিয় কণ্ঠশিল্পী। আগামী শনিবার মহরত হবে ‘ গন্তব্য ‘ নামের একটি সিনেমা। সেখানে তিনি প্লে ব‍্যাক করবেন। সেই বিষয়ে এই গুণী শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, “আগামী শনিবার আমি গন্তব্য সিনেমায় কণ্ঠ দেবো। সবার কাছে দোয়া চাই।
আমি সর্বশেষ গান করলাম নজরুল একাডেমিতে। নজরুলের মৃত্যুবারষিকীতে। নজরুল সংগীত -তিমির বিদারী- গজল।”

তিনি আরও বলেন, “ছোট বেলা থেকে মঞ্চে রেডিও, টিভি স্কুল, কলেজ,ভার্সিটি, চাকরিকালীন সময়ে দাপ্তরিক, মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠান, স্টাডি ট‍্যুর ও রোটারি কনফারেন্স বিভিন্ন দেশে আমেরিকা,কানাডা,ইনডিয়া,চীন, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড,ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, লন্ডন উচচ শিখখা লাভের সময় ওয়েলস ভাসিটি যুক্তরাজ্যে প্রচুর গান করেছি।২০২১ এ আমেরিকা যাই, ১১ মাস ছিলাম। ক্লেমসন ভার্সিটির মনচে গান করি।করোনা কালিন সময়ে অন লাইনে অনেক অনুষ্ঠানে গান করেছি। “সুরের ভুবন” নিউইয়র্কে।” কুষ্টিয়া এক্সপেরস” নজরুল একাডেমির অনুষ্ঠান, নজরুলের জন্ম বারষীকিতে সুর নন্দন অনুষ্ঠানে। নজরুল সংগীত, আধুনিক, দেশাত্মবোধক, নজরুল সংগীত এর ইংলিশ ভার্সান, প্রখ‍্যাত সুরকার আজাদ রহমানের খেয়াল উৎসবে, খেয়াল পরিবেশন করেছি চ‍্যানেল আই এ। প্রচুর প্রশংসা ও মন্তব্য পেয়েছি।”

তিনি বলেন, ” আমি লিখছি, সুর দিচ্ছি, গাইছি।সিডি, ভিডিও করছি, ইউ টিউবে দিচ্ছি। সমাজের অবক্ষয়ের উপর লিখছি, এবং প্রতিবাদি সুরে গাইছি-যেমন নির্যাতিত নারী, করোনার অভিষাপ। নজরুলও তাঁর সংগীত এর উপর গবেষণা করছি। যতদিন বেঁচে থাকবো এভাবেই সংগীত জগতে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। কারণ গান আমি খুব ভালো বাসি। আমার গানের মাধ্যমে সমাজের অবক্ষয়ের প্রতিবাদ ও প্রতিকার করতে চাই। এতদিন তো সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে সরকারের কাজ করেছি। এখন অবসর জীবনে, গানের মাধ্যমে সমাজের কাজ করতে চাই।”

তিনি বলেন, ” ছোট বেলা থেকেই গান করি। সংসার ও সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায়, কিছুদিন গানে তেমন একটা সময় দিতে পারিনি। এখন অবসর জীবন, প্রচুর সময়, গান লিখছি,সুর দিচ্ছি, গাইছি,গবেষণা করছি। চলচ্চিত্রে শনিবারে গাইবো। গানের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ, প্রতিকার করতে চাই। আপনারা আমার সাথে থাকবেন, আমার গান শুনবেন ও আমার এই মহত উদ্দেশ্যের সফলতা কামনা করবেন। সকলের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।”

উল্লেখ্য যে, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস পারভীনের বর্ণাঢ্য সঙ্গীতময় কর্ম জীবন, সাহিত্য জীবন নিয়ে লিখতে গেলে তার জীবনের প্রতিক্ষেত্রে সফলতা সম্বন্ধে অনেক কিছুই বলতে হয়। তিনি একাধারে একজন সঙ্গীত শিল্পী, একজন সরকারের উচ্চপদস্ত সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন, একজন কবি ও সাহিত্যিক । তিনি একজন সফল ব্যক্তি ও আলোচিকত নারী। ছোটবেলায় গানে হাতে খড়ি মায়ের কাছে। ক্লাস ৫ এ উস্তাদ ফজলুল হকের কাছে নজরুল সঙ্গীত দিয়ে তার প্রথম পথচলা। ১৪ইং আগষ্ট স্বাধীনতা দিবসে (পূর্ব পাকিস্তান) জামালপুর সার্কিট হাউস ময়দানে বিরাট সমাবেশ দেশাত্ববোধক গান করেন।

হাজারো করতালির মাধ্যম কোলে করে ষ্টেজ থেকে নামানোহয় ছোট্ট সুকন্ঠি গায়িকা ফেরদৌস পারভীন কে।বিদ্যাময়ী স্কুলের পাঠ শেষ করে, বিদায় অনুষ্ঠান গান(এই আধারে আমি চলে গেলে) করে ছাত্রী শিক্ষক সকলকে কাঁদিয়ে ফেলেন। কলেজে সঙ্গীত
প্রতিযোগীতায় দু বছরই আনুনিক ও নজরুল সঙ্গীত
১ম হন। বি, এস, সি পড়াকালীন সময় ইন্টার কলেজ
প্রতিযোগীতায় নজরুল সঙ্গীতে ১ম হন। এই সময়
খেয়াল ও রাগ প্রধান গানের তালিম নিতে থাকনে।
উস্তাদ বিশ্বদেব ভট্টাচার্জের কাছে।
.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নবীন বরণ উৎসবে
আধুনিক গান গেয়ে খুব প্রশংসা ও পরিচিতি পান।
রেডিওতে মুন্সি রইস উদ্দিনের স্ত্রী গান শিল্পি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন ও টিভির সরকার হাবিবুল আলম খানের কাছে গানের তালিম ও রেডিওতে আধুনিক গানে (১৯৭১ এ) তালিকাভুক্ত হন।

২২শে ফেব্রুয়ারী তার গান (আমার গানের
সুর জেগেছে) প্রচারিত হয় রেডিও (পর্ব পাকিস্তান)
তে। উত্তাল অবস্থায় স্বাধীনতা ৬ই মার্চে ভার্সিটি হল ছেড়ে চলে যান গ্রামের বাড়ী শেরপুরে যখন উত্তাল আবদ্ধ দেশ।

স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর আগমনে ময়মনসিংহ সার্কিট
হাউজ ময়দানে বিরাট অনুষ্ঠানে গান করলেন।
মানবতার মিছিলে আমি গান গাই” ছেলে হারা শত
মায়ের কান্না, স্বামী হারা শত মেয়ে অশ্রু
তাদেরই গান গাই”। আবার ও কাঁদালেন হাজারো
শ্রোতাদের এ ছারা বহু মুক্তি যোদ্ধাদের স্বাগত
অনুষ্ঠানেও মুক্তিযুদ্ধের গান করেছেন, শিল্পী
পারভীন। ১৯৭৮ থেকে শিল্পী বিটিভিতে
তালিকাভুক্ত।

সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস পারভীন ১৯৮৩
তে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য স্কলারশিপ নিয়ে চলে গেলেন যুক্তরাজ্যে। ওয়েলস ভার্সিটিতে প্রচুর গান করেন। বিবিসি ওয়ার্সসার্ভিস থেকে তার
সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। দেশে ফিরে দাপ্তরিক ও সাংসারিক কাজে ব্যস্ত হওয়ায়, গানে তেমন একটি
সময় দিতে পারছিলেন না। যার ফলে যে পরিচিতি টা হতো জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তার বদলে হলে সফল দক্ষ সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে। তবুও ফুসরত নেই গান করার।এত ব্যস্ততার মধ্যেও ১২টি আধুনিক গানের একটি সিডি প্রকাশ করলেন। পত্র পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার ও প্রশংসা পেয়েছে।

সুরেলা কণ্ঠশিল্পী পারভীন। তাঁর গানগুলির সুরকার হাবিবুল আলম ও গীতিকার ছিলেন আব্দুল হাই। তিনি একসময় ব্যস্ত হয়ে গেলেন ডি.এফ. আই, ডির একটি মৎস্য প্রশিক্ষন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হয়ে ৪ জন বৃত্রিশ কনসালটেন্টকে নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চললেন। বিদেশের অনুষ্ঠানেও যোগদান করলেন। (আমেরিকা, দাপ্তরিক কাজে ও স্বামী নাট্যশিল্পী ও রোটারিয়ান আব্দুর রহমান মন্টুর সাথে কানাডা, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ব্যাংক, ফিলিপাইন, চীন, ভারত) সর্বত্রই অনুষ্ঠানে প্রচুর বাংলাদেশের গান পরিবেশন করেছেন। যোগদান করলেন উপ-সচিব হিসাবে মন্ত্রনালয়ে। একদিন সাংস্কৃতিক সন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মিটিং এ নজরুল সঙ্গীত শিল্পী আবদুল মান্নানের সাথে পরিচয় হয়। তিনি শিল্পীকে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদের (২০০৪) এ সদস্য করেন।

চাকুরী জীবনের শেষের পথে আবার কিছু কিছু সঙ্গীত পরিবেশন আরম্ভ করলেন মঞ্চে, রেডিও ও টিভিতে। অবসর সময় কাঠানোর জন্য পূর্ণ উদ্যমে, রেডিও টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে আবার ও গান শুরু করলেন। সাক্ষাৎকারে ও সরাসরি গান প্রচারিত হলো। সঙ্গীত, আধুনিক ও হামদনাত পরিবেশন করলেন। ইটিভি, এসএটিভি, চ্যানেল-১৬, বাংলা ভিশন, জিটিভি, বিটিভিতে।

পি, এইচ, ডি অধ্যায়নরত অবস্থায় তার ভার্সিটির অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বিদেশী শ্রোতাদের কাছে প্রশংশিত হন। আচমকা ২০১৪ সালে স্বামীর মৃত্যুতে ডিপ্রেশানে চলে যান। চ্যানেল আই এ বাংলা খেয়াল উৎসরে শিল্পী বাংলা গান পরিবেশন করলেন। উক্ত সময়েই অজয় মিত্রের সঙ্গীত পরিচালনায় নীরবে “এসো প্রিয়” শিরোনামে ১০টি নজরুল সঙ্গীতে একটি এ্যালবাম বের করলেন। কয়েকটি আধুনিক গান ও সি.ডি করেন। ফেরদৌস পারভীন তার স্বামীর উদ্দেশ্যে একটি গান (মিষ্টি হাসির ছায়া) লেখেন ও কণ্ঠ দেন এবং ভিডিও করেন।

এরপর মুজিব বর্ষে জাতির পিতার উপর গান লিখেন ও গেয়ে ভিডিও করেন। এস, এ, টিভিতে ভিডিও দুটির উপর সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়। উপরে উল্লেখিত সবগুলো গানই ইউটিউবে আছে। করোনা কালে সুর নন্দন সংগঠনের মাধ্যমে অনলাইনে ১০টি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ইতিমধ্যে শিল্পী নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন ও গবেষণার উপর ২০১২ রাজকীয় ডায়না পুরষ্কার পান। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ থেকে বাসপ ২০ এবং মৃত্তিক একাডেমী পুরস্কার-২০২১ পান।

বর্তমানে শিল্পী ব্যস্ত গান পরিবেশন রেডিও, টিভি, মঞ্চে, গান লেখেন, সুর দেন, সিডি, ভিডিও করেন। অনলাইনে এ গান করছেন। তার লেখা ৫৫টি গান ও কবিতা সম্বলিত বই মিষ্টি হাসির ছোয়া এবার বই মেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। অনলাইন এবিসি বাংলা টিভিতে তার দুটো সাক্ষাৎকার যায়। সফল যারা কেমন তারা আলোকিত নারী। কে টিভিতে বিজয় দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে তার বক্তব্য প্রচার হয়। শুভেচ্ছা বানী যায় কে-টিভি ও আলপনা
টিভিতে পংক্তির খোলা জানালা অনুষ্ঠানে শিল্পীর ২টি গান ও একটি তার লেখা

কবিতা আবৃত্তি প্রচার হয়। কবিতার আঙ্গিনায় তার সাক্ষাৎকার ভাষা দিবসের উপর ও তার বই মিষ্টি হাসির ছোয়া থেকে ৪টি কবিতা আবৃত্তি করেছেন এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি শিল্পী সমাজসেবা মূলক কাজ যেমন নারী উন্নয়ন, অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কল্যান মূলক কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রে ও সংসারে সময় দিতে যেয়ে সঙ্গীতের দিকটা কিছুটা স্তমিত হয়ে গিয়েছিলো। অবসর জীবনে তা তীব্র ভাবে জ্বলে উঠেছে। সঙ্গীত জগতে একজন নক্ষত্র হয়ে ফুটে উঠেছেন। এ বয়সেও যেভাবে তিনি এগিয়ে চলেছেন সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমরা তার উত্তরোত্তর সফলতা ও সু-স্বাস্থ্য কামনা করি।