Home জাতীয় গণশুনানি লাগবে না, প্রজ্ঞাপনেই জ্বালানির দাম বাড়াতে পারবে সরকার

গণশুনানি লাগবে না, প্রজ্ঞাপনেই জ্বালানির দাম বাড়াতে পারবে সরকার

21

ডেস্ক রিপোর্ট: বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ জ্বালানির দাম বাড়ানো-কমানোর ক্ষমতা সরাসরি সরকারের হাতে নিতে সংসদে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), বিল-২০২৩’ পাশ হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল রবিবার সংসদে বিলটি পাশের প্রস্তাব করলে এতে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই জন ও গণফোরামের এক জন সংসদ সদস্য। তাদের আপত্তি-সমালোচনার মুখেই পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়েছে।
বিলটি পাশের ফলে এখন থেকে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম নির্ধারণে আর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানির দরকার হবে না, সরকার যখনই প্রয়োজন মনে করবে তখনই প্রজ্ঞাপন দিয়েই দাম বাড়াতে পারবে। বিলটি পাশের প্রতিবাদে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান সংসদ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াক আউট করেন।
পাশ হওয়া বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসবের উৎপাদন বৃদ্ধি, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।’

বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, ‘পানির ট্যাংকের নিচে ফুটো থাকলে কখনোই তা ভরাট করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল থাকবে ততদিন এখানে লস থাকবে। সাবসিডিটা কী। মন্ত্রী এক্সপ্লেইন করবেন। সাবসিডির নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এই টাকা দিয়ে প্রাইভেট পাওয়ার প্লান্টকে সেখানে পেমেন্ট করে।’
বিলটি জনমত যাচাইয়ের জন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।’ এটিকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে দুরবস্থার কারণ লুটপাট আর দুর্নীতি। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।’ মোকাব্বির বলেন, ‘বিদ্যুতের অরাজকতা আর লুটপাট নিয়ে কথা বললে সরকারের গায়ে লাগে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন- বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে কী হবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আছে, তিনি করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর ঐ বক্তব্যের পর আমার নির্বাচনি এলাকার জনগণ মনে করছেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে, এ কারণে তারা আমাকে কম কথা বলার অনুরোধ করেছেন। এজন্য আমি বেশিকিছু বলতে চাই না।

গণফোরামের এই এমপি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মানুষ দিশেহারা। সামনে রমজান। এর আগে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। বিলটিতে সংশোধনী দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর ওপর এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু, এতে সরকারের কিছু যায় আসে না। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের রক্ষার জন্য ইনডেমিনিটি (দায় মুক্তি) দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার আর ইনডেমনিটি, কালো আইন একসঙ্গে যায় না। মানুষের ওপর আস্থা হারালে সরকার কালো আইন করে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার কি জনগণের আস্থা হারিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই আইন করছে? এই আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো।
মোকাব্বির খান বলেন, ‘এই বিল পাশ হলে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। যেহেতু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিলটি প্রত্যাহার করেননি, তাই আমি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম, আমি ওয়াক আউট করলাম।’ একথা বলে কিছুক্ষণের জন্য তিনি অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিলটি পাশের আলোচনায় জাপার এমপি অধ্যাপিকা রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ঢাকায় দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না। সকাল থেকে ৩টা-৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। গ্রামের অবস্থা আরো খারাপ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।’

তিন এমপির আপত্তি ও সমালোচনার জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুতে যে সাবসিডি সেটা মূলত জনগণের প্রতি ইনভেস্টমেন্ট। কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা ছিল স্বল্পমেয়াদি।’ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘১০ বছরের জন্য চুক্তি করে একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হলে সেখানে থাকুন বা না থাকুন ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এমন বলা যাবে না যে- যেই কয়দিন থাকবেন সেই কয়দিনের ভাড়া দেবেন।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ, সেটির অর্ধেকই চুরি হতো।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের এই ধারায় সংশোধনী আনা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই আইনে পরিণত করতে অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
ইত্তেফাক