Home সারাদেশ খুলনা-৬ আসনে বিম্ময়কর চমক, নৌকার প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান

খুলনা-৬ আসনে বিম্ময়কর চমক, নৌকার প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান

38

খুলনা অফিস: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় বিস্ময়কর এক চমক দেখা গেছে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে। সেখানে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতা ও পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান।
আজ রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল থেকে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় খুলনা জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। যার একটি খুলনা-৬ আসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান দীর্ঘ দিন দলের মধ্যে কোনঠাসা হয়েছিলেন। তারপরও দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন আওয়ামী রাজনীতির এই ত্যাগী নেতা। সেটা বিবেচনায় নিয়ে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার মনোনয়নের খবরে নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় পাইকগাছা-কয়রার বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
জানাগেছে, ছাত্র জীবন থেকে গণমানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার এই নেতা আশির দশক থেকে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন করে পরিচিতি পান। বারবার পুলিশ ও প্রভাবশালী মহলের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। কয়েকবার জেলও খেটেছেন। এরপরও বারবার কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরআগে ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেও সেই বিজয়ী ছিনিয়ে নেয় তৎকালীণ স্বৈরশাসক এরশাদ।
সাবেক ছাত্র নেতা মো. রশীদুজ্জামান ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই স্বৈরাচার বিরোধী-আন্দোলনে ছাত্রঐক্য পরিষদের ব্যানারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালে সামরিক জান্তার হাতে গ্রেফতার হয়ে শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে কারাবরণ করেন তিনি। তিনি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশ পত্র আদালতে দেখিয়ে জামিন নিয়েছিলেন। এম.এ. পরীক্ষার পূর্বে আবারো তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সঙ্গে আরো তিনটা মামলা যোগ করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা। দীর্ঘদিন এই মেয়াদে জেল খাটতে হয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মো. নূরুল হকের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করায় সারাদেশে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর তার গোটা পরিবারের ওপর চারদলীয় জোটের দ্বারা অবর্ণনীয় নির্যাতন ও হয়রানি শিকার হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডজনখানেক মামলা মোকাবেলা করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা-পড়া, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি নিজ এলাকায় কৃষকদের জমি লবণ পানি মুক্ত রাখার জন্য ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন মাটি ও মানুষের নেতা রশীদুজ্জামান। আশির দশকে খুলনা জেলার যে সকল এলাকায় চিংড়ি চাষ শুরু হয়েছিল, সেই সকল ব্যাপক এলাকার মানুষদের সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। এজন্য তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনসহ বহু মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। দিনের পর দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। কিন্তু সেই আন্দোলন সফল হয়েছে। আক্রান্ত সেই সকল এলাকায় এখন ধান, তরমুজ ও সবজি চাষ করে এলাকার জনগণ ব্যাপক লাভবান হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে এলাকায় ফিরে রাজনীতিতে সময় দেওয়ার জন্য চাকরির প্রত্যাশা করিনি সাহসী তরুণ নেতা রশীদুজ্জামান। এলাকায় পড়ে থেকে রাজনীতি ও সামাজিক কাজেই সময় দিয়েছেন তিনি। খুঁজে খুঁজে অনেক সম্ভাবনাময় যুবকদের সংগঠিত করে দলে সম্পৃক্ত করেছেন। যে কারণে অতীতে ওই আসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও বর্তমানের চিত্র উল্টো। জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রার্থীরা যেকোনো নির্বাচনে বিজয়ী হন।