Home রাজনীতি খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না : মির্জা ফখরুল

32

স্টাফ রিপোটার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে তার পরিবার সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদনই করেননি, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথাও বলেছেন। দেশের মানুষ এত বোকা নয়। তারা বুঝেছে শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। তাকে যদি আটক রাখা যায় তাহলে তারা (সরকার) অবৈধ শাসন টিকিয়ে রাখতে পারবে। আজকে তাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়। দেশের মানুষ পরিস্কার জানিয়ে দিতে চায় খালেদার কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।

সোমবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ২টায় এ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। মির্জা ফখরুল যখন মঞ্চে আসেন তখন বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

সমাবেশের শেষে খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে আগামী ১৪ অক্টোবর বিএনপি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১ টা থেকে তিনঘন্টার গণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের চিকিৎসকরা পরিস্কার করে বলেছেম, দেশে যা যা করার দরকার করা হয়েছে সবই করা হয়েছে, এখন তাকে সুস্থ করতে হলে বিদেশে না নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশে সহনশীল রাজনীতি সৃষ্টি করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। আজকে তারা তা মানছেন না। এই আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দল নয়। এরা ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিনত হয়েছে।

ফখরুল বলেন, আজকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিএনপির ১৫ জন নেতাকে ৪ বছর করে সাজা দিয়েছে। গতকাল আরো ১৫ জন সাবেক ছাত্রনেতাকে জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করছে এদেরকে আটক রাখলে বিএনপিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি সাজার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কর্মী সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মত। অনেক সিনিয়র নেতাদের সাজা দিয়ে আটক রেখেছে। এগুলো করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবেন না।

তিনি বলেন, এবার ক্ষান্ত হোন। আর অত্যাচার করবেন না। আপনারা বুঝতে পারছেন না আপনাদের জন্য কি দাড়িয়ে আছে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আইয়ুব-ইয়াহিয়াও পারে নাই, এরশাদ পারে নাই। আপনিও পারবেন না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রাজনীতির বাইরে গিয়ে বিচার করবেন। রাজনীতির মধ্যে থাকা যাবে না। আজকেও রাজনৈতিক কারণে ১৫ জনকে ফরমায়েশি রায় দিয়ে নেতাদের জেল দেওয়া হয়েছে। সরকার আদালতকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আমিনুল হক ও লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আজম খান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকারের কাছ থেকে সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি আশা করা যায় না। এরা দানবীয় সরকার। একটি মৃত্যু পথযাত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমান করে এরা কতটুকু অসভ্য। খালেদা জিয়াই এ দেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলো। তারা বাকশালের পেটে ঢুকে গিয়েছিলো। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র এনেছিলেন। আজকে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। কোন সংবিধানের দোহাই দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন খালেদাকে আমি ক্যান্টমেন্ট বের করেছি। তাহলে কোর্টের দোহাই দিলেন কেনো? মুলত সেদিন থেকেই তাকে হত্যার ছক তৈরি করা হয়েছিলো।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা হাজার বলছি। কিন্তু অবৈধ সরকার শুনছে না। আজকে ১৫ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। বিচারবিভাগকে কাজে লাগিয়ে আবারও একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের কারো ঠিকানা জেলখানা অথবা ইলিয়াস আলীর অবস্থা হবে। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেছে তা উত্তর দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। বিএনপি নেতাকর্মীরা কখনো এই অসভ্য ভাষায় কথা বলে না। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কাউকে চিকিৎসা করতে দিবেন না। আপনার চিকিৎসাও বাংলাদেশে হবে না। কেউ চিকিৎসা করাবে না। শেখ হাসিনার পতন হওয়া ছাড়া কেউ মাঠ ছাড়বে না। সভা সমাবেশে মাধ্যমে এই সরকারের পতন হবে না। কঠিন কর্মসূচির প্রস্তুতি নেন।
তিনি বলেন, আজকে কত হাজার কোটি টাকা লুট করেছে হিসেব দিতে হবে। আজকে বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক সংস্থাও এর হিসাব চায়। খালেদা জিয়ার কিছু হলে আপনার মৃত্যু হলেও আপনার মরণোত্তর বিচার হবে।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়া সম্মুখ দরজা দিয়ে রাজনীতিতে নেমে জনগণের নেত্রী হয়েছেন। এটি সরকার সহ্য করতে পারেনি। তাই তাকে অন্তরীণ করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার চেষ্টা করছে। আজকে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে তাদের সহ্য করতে পারে না। আজকে বিনাদোষ তাকে আটক রাখা হয়েছে। তারা ভেবেছিলো বাকশাল করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। তাই বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। মনে করেছিলো খালেদাকে ধ্বংস করলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে দেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে আছেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে যে দেশ স্বাধীন করেছি সে দেশে আইনমন্ত্রী বেআইনি কথা বলে। অর্থমন্ত্রী অনর্থের মুল। পররাষ্ট্র যে ভাষায় কথা বলেন মনে হয় উনি অন্য দেশের মন্ত্রী। বানিজ্যমন্ত্রী নিজেই ব্যবসায়ীর ভাষায় কথা বলেন। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছি, সে গণতন্ত্র ভোগ করতে পারছি না। গণতন্ত্রের মাকে আজকে বন্দী রাখা হয়েছে। আজকে দেশের কোটি কোটি মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন। আজকে নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য নেতাদের কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। সরকার এগুলো করে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে যারা খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবে আটক রেখেছে তারা শুধু সংবিধান লঙ্ঘন করেনি, তারা হত্যা পরিকল্পনার আসামী। আজকে ডাক্তাররা পরিস্কার করেছে তারা খালেদাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে শংকা করছেন তাকে খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু দেওয়া হয়েছে তার জন্য বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এটি ফ্যাসিস্টদের কাজ। তাদের কাজ হত্যা করা, জেলে নেওয়া, গুম করা। এই ফ্যাসিস্ট যতদিন থাকবে দেশনেত্রীর মুক্তির সুযোগ দেখছি না। তাই আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করতে হবে। দেশকে মুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপির সাথে আলোচনার সুযোগ নেই। থাকবে কি করে। তাহলে ভোট চোরের প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে কিভাবে?

সেলিমা রহমান বলেন, সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। তারা জানে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। একটি মানুষ কতদিন বাঁচবে কেউ বলতে পারবে না। অথচ, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যে অযাচিত কথা বলেছেন সারাদেশের মানুষ তার বক্তব্যে ছি ছি দিচ্ছে।