ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের বড় জোগান আসছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই দুই দেশ থেকে খাদ্য আমদানিকারক দেশ, বিশেষ করে আফ্রিকাসহ স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক অস্হিরতার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আংকটাড)। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম, যব, ভুট্টা, ভোজ্য তেল বিজ আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নামও।

আংকটাডের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যত গম আমদানি করে তার ১৮ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। গমের ৯ শতাংশের জোগান আসে ইউক্রেন থেকে। শুধু গম নয়, ভুট্টার ১৩ শতাংশ, যবের ১১ শতাংশ, সূর্যমুখী তেলের ৩৬ শতাংশ আসছে ইউক্রেন থেকে। অন্যদিকে বিশ্বেবাজারের ১২ শতাংশ যব এবং ১৭ শতাংশ সুর্যমুখী তেলের জোগান আসছে রাশিয়া থেকে। ফলে এই যুদ্ধ উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত অনেক দেশের বাণিজ্য, খাদ্যপণ্যের দাম ও আর্থিক বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার কারণে এমনিতেই অর্থনীতিতে চলছে দৈন্যদশা। তার ওপর নতুন করে এমন সংকটের ফলে কোনো কোনো দেশে অভ্যন্তরীণ অস্হিরতা, খাদ্য ঘাটতি এমনকি মূল্যস্ফীতিজনিত আর্থিক মন্দাও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাণিজ্য ও উন্নয়নের ওপর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আংকটাডের তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে— খাদ্য ও জ্বালানি খাত। কারণ, রাশিয়া ও ইউক্রেন কৃষিখাদ্যের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশ। খাদ্যপণ্যের ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাব বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ অনেক দেশই খাদ্যপণ্যের আমদানির জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, তুরস্ক আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে গম, ভুট্টা, যব, সূর্যমুখী তেল ও বীজ আমদানি করে তার প্রায় ২৬ শতাংশই নেওয়া হয়ে থাকে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। চীনের ক্ষেত্রে এই হার ২৩ শতাংশ, মিশরের সাড়ে ২২ শতাংশ, ভারতের ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে আমদানিকৃত এসব পণ্যের ৩ দশমিক ৭ শতাংশ আসছে রাশিয়া থেকে এবং ইউক্রেন থেকে আসছে ২ দশমিক ১ শতাংশ।

এছাড়া স্পেনের ৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসের ৮ দশমিক ৯ শতাংশ পণ্য আসছে ইউক্রেনে হতে। আংকটাডের হিসাব অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুগবে নিম্ন আয়ের দেশগুলো। এ দেশগুলোর যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি করে তার ৫ শতাংশের দাম বেড়ে যেতে পারে। অবশ্য ধনী দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই হার ১ শতাংশের নিচে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার উত্পাদন কমে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম বেড়েছে। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক। দেশটি বিশ্ববাজারে সারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য, ধাতব পদার্থে রপ্তানি করে থাকে।-ইত্তেফাক