Home স্বাস্থ্য ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে ধর্মীয় কোন বাধা নেই

ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে ধর্মীয় কোন বাধা নেই

16

ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের জন্য দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

স্টাফ রিপোটার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) লক্ষ প্রাণ বাঁচাতে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টে ধর্মীয় ও আইনী গুরুত্ব বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাডাভেরিক অঙ্গদান ও ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে ধর্মীয়, আইনী ও সমাজের বিশিষ্টজনদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার দুপুর ১ টায় (৪ মার্চ ২০২৪ খ্রি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল এ গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।

সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাগে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের লোক বলের সে সক্ষমতা নেই। এজন্য আমরা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট টিম তৈরি করছি। ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করছি। আমরা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে কডিনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য শিশু হাসপাতাল আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্যেও আমরা বিশেষজ্ঞ দল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামি দেশ যেমন ইরান, সৌদি আরব, কুয়েত ইত্যাদি দেশেও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে। এতে কোন ধর্মীয় বাধা নেই।ইসলাম ধর্মসহ হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্মসহ সকল ধর্মেই মানবকল্যাণের কথা বলা হয়েছে।মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। তাই এই ধরণের মহৎকাজে অঙ্গদান করলে তাতে কোন ধর্মীয় বিধি নিষেধ নেই। আজকের গোল টেবিল বৈঠকে ধর্মীয় গুরু, চিন্তাবিদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্মানিত মুফতিও একথা ধর্মীয় ব্যাখা দিয়ে বলেছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ট্রান্সপ্লান্টের রোগীরা সেবা নিতে যাচ্ছে। এতে দেশের প্রচুর অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। যদি পার্শ্ববর্তী দেশে যেতে হয় সেজন্য এম্বাসীতে একটি সেল গঠন করে বোর্ডের সুপারিশের মাধ্যমে যেতে হবে। এজন্য এম্বাসীগুলোকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বার জানান তিনি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেলের আহ্বায়ক প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের (অঙ্গ প্রতিস্থাপন) সঙ্গে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সংযুক্ত করতে এবং দেশে এর অগ্রগতির বিষয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে চাই। সারাহ ইসলামের মাধ্যমে দেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট শুরু হয়েছে, এটা আমাদের জন্য বড় একটি বিষয়। এই মহৎ কাজটিকে আরও অনেক বেশি ছড়িয়ে দিতে আমি কাজ করতে চাই ।আমাকে যদি ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়, তাহলে আমি এটা নিয়ে সংসদে কথা বলবো। সবার হয়ে সংসদে কাজ করতে পারা অনেক বেশি ভালো লাগার বিষয়।

তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে। তবে নিজের কোনো অঙ্গ দিয়ে যদি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা যায় তা অনেক বড় পাওয়া।

ফেরদৌস আরও বলেন, আজকে সব ধর্মের মানুষই কথা বলেছেন। তাদের কথায় বোঝা গেল, কোনো ধর্মে যেহেতু দেহদানে বাধা দেয় না, তাই সবাই দিতে পারে এটি।

অনুষ্ঠানে প্রথম ক্যাডাবেরিক ট্রান্সপ্লান্ট এ অঙ্গ দেয়া সারাহর মা শবনম সুলতানা বলেন, আমার সন্তান যে মানুষের উপকারে ভূমিকা তা আমাকে আনন্দিত করে। সারাহ সবার মাঝে বেচে থাকবে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের দেশের মানুষকে যাতে চিকিৎসার জন্য বাহিরের অন্য দেশের কোথাও যেতে না হয়ে তার ব্যবস্থা প্রয়োজন।

দেশের দ্বিতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট এ দেহদান করেন মাসুম। তার স্ত্রী তানিয়া সবাইকে তার স্বামী মাসুমের জন্য দোয়া চায়। তবে আবেগতাড়িত হয়ে যাওয়ায় এর বেশি কোনো কিছু বলেন নি।

সারাহর দান করা চোখে আলো ফিরে পাওয়া মো সুজন বলেন, আমার দুই চোখের কর্নিয়ায় সমস্যা ছিল। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। বিএসএমএমইউ থেকে জানিয়েছিল কর্নিয়া পেয়ে আমাকে কল দিবে। এরপর কল দিয়ে কর্নিয়া প্রাপ্তির কথা জানায়। পরে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে আমার কর্নিয়া স্থাপন হয়। এখন আমি দুই চোখেই ভালো দেখতে পাই। সারাহ ইসলামের চোখে আমি চোখে আলো ফিরে পেয়েছি৷ তার জন্য অনেক দোয়া করি আমি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশিদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় মহাদেবমহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।