Home কৃষি কৃষিখাতকে ঢেলে সাজাতে আন্তরিকভাবে কাজ করবো: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিখাতকে ঢেলে সাজাতে আন্তরিকভাবে কাজ করবো: কৃষিমন্ত্রী

51

স্টাফ রিপোটার : “বাংলাদেশের মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় কৃষির মাধ্যমে। কৃষকদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না। কৃষকের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগ থেকেই নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশের যেসব মানুষ বেকার তাদের কৃষিতে কাজে লাগাবো। পতিত পড়ে থাকা জমি চাষের আওতায় আনবো। আমি উদ্যোগ নিয়ে কৃষি কাজে মানুষকে উৎসাহিত করবো।”

মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা আর নিজের স্বপ্নের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ড. আব্দুস শহীদ এমপি এসব কথা বলেন।

নতুন কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসন থেকে টানা সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।

উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয়কে মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তি ও শপথ শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মৌলভীবাজারের জেলা ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, ‘৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “এতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেলো। এরমধ্যে কৃষিকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য টেকসই ও নিরাপদ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ইকোনোমিক জোন, কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থসামাজিক পরিকল্পিত উন্নয়ন, মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, পর্যটন খাতে উন্নয়ন সহ মৌলভীবাজার জেলায় সামগ্রিক উন্নয়নে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন তিনি।”

নতুন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, “মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় কৃষির মাধ্যমে। আমি নিজেই মাছ, ফল ও শাক সবজি চাষ করি। দেশের কৃষি খাতকে ঢেলে সাজাতে আন্তরিকভাবে কাজ করবো। মন্ত্রণালয়ের চলমান কাজ এবং আগের কাজগুলো তদারকি করে দেখবো। কোথাও কোনো সংকট থাকলে সমাধানের চেষ্টা করবো। মাঠ পর্যায়ে ও বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কার্যক্রম কেমন চলছে তা জানাবো। সবার সহায়তায় কৃষিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”

ড. আব্দুস শহীদ এমপি আরও বলেন, “কর্মকর্তাদের অনেকেই মাঠে যান না অফিসে গালগল্প করে সময় কাটান। তারা যেন মাঠে যান, কৃষকদের সঙ্গে যেন তাদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ে সে বিষয়ে কাজ করব। মানুষকে কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করতে উঠান বৈঠক-কর্মশালাসহ নানা কর্মসূচি নেব। মানুষ যেন নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করেই সংসার চালাতে পারেন সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।”

সাবেক চিফ হুইপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার সাতবারের সংসদ সদস্য। গত মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়া মৌলভীবাজারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো.আব্দুস শহীদ এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় হুইপ, অষ্টম সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও নবম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।

মন্ত্রী সভায় ডাক পাওয়া ড. আব্দুস শহীদ আরেক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটা অত্যন্ত আবেগময় একটা মুহুর্ত। যখন আমাকে মন্ত্রিসভার বিষয়টি ফোনে জানানো হয়, তখন খুশিতে আমার চোখে জল চলে আসে।”

উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ সিলেটের রাজনীতিতে তিনি সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত।

এদিকে মন্ত্রী হওয়ার খবরে আনন্দের বন্যা বইছে নির্বাচনী এলাকা শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জসহ সমগ্র সিলেট বিভাগে।

কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল সহ মৌলভীবাজার জেলায় বিশাল আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে সর্বস্তরের জনগণ। শ্রীমঙ্গলের শ্যামা সুইটমিট এন্ড মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থানে জনগণের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ উদযাপন করতে দেখা গেছে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের।

উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহীদ ১৯৯১ সালে মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামীলীগ মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে তিনি এ আসন থেকে জয়লাভ করেন।

১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় হুইপ, ২০০১- ২০০৬ পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এবং ২০০৯- ২০১৪ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ম সংসদের তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ২০১৮-২০২৩ পর্যন্ত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির পালন করেছেন।

এছাড়া তিনি সংসদ কমিটি, পিটিশন কমিটি ও কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এরও তিনি সদস্য ছিলেন।

দীর্ঘ ৩৩ বছরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে তার অবদান। ১৯৯১ সালের প্রথম নির্বাচনে উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের সাথে মৌলভীবাজার-৪ আসনে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।

তখন এম সাইফুর রহমানের জামানত বাজেয়াপ্ত হলে আলোচনায় সরব হয়ে উঠেন এ পার্লামেন্টারিয়ান। এলাকায় জনপ্রিয় এ নেতাকে সাধারণ মানুষ বারবার নির্বাচিত করেছেন। সাধারণ মানুষ অনেকদিন পর তাকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই উপজেলায় আব্দুস শহীদের (নৌকা) মোট প্রাপ্ত ভোট ২ লক্ষ ১২ হাজার ৪৯১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী আবদুল মহিত হাসানী (মোমবাতি) প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৩৯০। ২ লক্ষ ৭ হাজার ১০১ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. উর্মি বিনতে সালাম।