Home জাতীয় কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ

কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ

24

ডেস্ক রিপোর্ট: বাজারে গিয়ে রীতিমতো হোঁচট খেলেন একটি গার্মেন্টস কারখানার ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করা আমজাদ হোসেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গতকাল রবিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে গিয়ে তিনি দেখলেন চাল, মসুর ডাল থেকে শুরু করে আটা, ময়দা , পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, চিনি সবকিছুর দামই বাড়তি। বাজার করার জন্য হিসাব করে যে টাকা নিয়ে এসেছেন তিনি, তা দিয়ে তার কাছে থাকা তালিকার সব পণ্য কেনা যাবে না। পরে তিনি সেই তালিকা কাটছাঁট করে অতি জরুরি পণ্যগুলো কিনলেন।
গতকাল বাজারেই তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অনেকটা হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো চাকরিজীবীদের তো আয় বাড়েনি। কিন্তু বিভিন্ন পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে তো আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না। শুধু আমজাদ হোসেন নয়, তার মতো স্বল্প আয়ের মানুষেরা কেউই আজ ভালো নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়েছে লাগামহীনভাবে। অক্টোবরের মূল্যস্ফীতির হিসাব এখনো পাওয়া না গেলেও গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর—এই দুই মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই ধরনের পণ্যেই মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্প্রতি তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে, দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, শিগিগরই সমাধানের লক্ষণ নেই। পাশাপাশি অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা বড় উদ্বেগের বিষয়। সবকিছুর দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। তারা মধ্যবিত্তকেও এখন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার কথা বলেছেন।

গতকাল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, আটা, ভোজ্য তেলসহ অনেক পণ্যের দামই বেড়েছে। দেশের হাটবাজারে এখন নতুন আমন ধানের গন্ধ। কিন্তু এরই মধ্যে বাজারে চালের দাম কেন বাড়ছে—এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে এক থেকে দুই টাকা বেড়ে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬৫ থেকে ৮২ টাকা, পাইজাম/লতা ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, বি-আর ২৮ জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের পাশাপাশি আটার দামও বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটায় দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। সংস্থাটি জানিয়েছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৩ টাকায়। তবে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর খুচরা সাদা আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায়।

বেড়েছে বড়দানা মসুর ডালের দাম। কেজিতে ২ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। এছাড়া মাঝারি দানা মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও ছোট দানা মসুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মাংসের দামও বাড়তি। ডিমের হালি এখন ৫০ টাকা। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষ যে মাছ, মাংস না কিনে সবজি কিনবে তারও উপায় নেই। কারণ, সবজির দামও অনেকটাই নাগালের বাইরে। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুমুখি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা, কাঁকরল ৬০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, টম্যাটো ১২০ টাকা, মূলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

তেলের দাম আরো বাড়বে!

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অস্বাভাবিক দরপতনের কারণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯৫৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। চাল, ডাল, পেঁয়াজের, সবজি, চিনির পাশাপাশি নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সয়াবিন তেলের বিষয়টি আমাদের ট্যারিফ কমিশন ঠিক করবে। খুব শিগিগরই বিষয়টি পর্যালোচনা করে তারা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে এ কষ্টের জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতি দায়ী। এখন বৈশ্বিক কারণ তো আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারব না। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
ইত্তেফাক