Home রাজনীতি কল্পনা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে বাঘাইছড়িতে গণবিক্ষোভ

কল্পনা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে বাঘাইছড়িতে গণবিক্ষোভ

11

চট্টগ্রাম অফিস: কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গণবিক্ষোভ করেছে দুই নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা। একই সাথে তারা বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন।

আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল ২০২৪) সকাল ৯টায় বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক বনানি বনবিহার গেইট থেকে একটি গণবিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সাজেকের প্রধান সড়ক হয়ে উজোবাজারে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও শ্লোগান দেন।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিশাখা চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য অপর্ণা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি নিউটন চাকমা, সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অমিতা চকামা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য অমিত চাকমা।

সমাবেশে নিউটন চাকমা বলেন, ’৭১ সালে বাংলাাদেশ স্বাধীন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতিসত্তা ও সাধারণ জনগণ এখনো স্বাধীনতা পায়নি। দেশ স্বাধীনের পরপরই আমাদের জুম্ম জাতিসত্তার উপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়।

তিনি আরো বরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নারী নির্যাতন, খুন, গুম অপহরণ চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘৯৬ সালে নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কল্পনা চাকমাকে লে. ফেরদৌস কর্তৃক অপহরণ করা হয়। কিন্তু এখনো আমরা এ অপহরণ ঘটনার সুবিচার পাইনি। বরং আদালত কর্তৃক মামলা খারিজ করে দিয়ে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমরা এই বিচার মানি না, মানবো না। দেশের যে আইন মানুষকে হয়রানি করে সেই আইন আমরা মানি না।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ডজনের অধিক গণহত্যা চালানো হয়েছে, অসংখ্য মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যে রাষ্ট্র পিতাকে অসহায় করে, সন্তানকে অসহায় করে সে কেমন রাষ্ট্র প্রশ্ন রাখতে চাই।

যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিসত্তাগুলোর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা করা, কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেয়ার নানা পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

সাজেকে ইউপি চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, কল্পনা অপহরণ ঘটনাটি অনেক বছর হয়েছে। এ ঘটনা ইতিহাস হয়ে থাকবে। ঘটনাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে। তিনি এ ঘটনার বিচারের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

পিসিপি নেতা অমিত চাকমা বলেন, লে. ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনাটি ২৮ বছরেও কোন সরকার সুষ্ঠু বিচার করেনি। চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার না করে আদালত মামলা বাতিল করে দিয়েছে। আমরা এ অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

তিনি কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার বিষয়ে বলেন, মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা সুস্পষ্টভাবে লে. ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক্ ও সালেহ আহম্মদকে মামলা দায়ের করলেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে মামলা ঝুলিয়ে রেখে ৩৮ জন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেন। শেষ পর্যন্ত ৩৯তম কর্তকর্তা রাঙামাটি পুলিশ সুপার তারিকুল হাসান অপহরণকারীদের চিহ্নিত না করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তার বিরুদ্ধে বাদী কালিন্দী কুমার চাকমার নারাজি আবেদনের ওপর চলমান শুনানিতে গত ২৩ এপ্রিল রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা বেগন মুক্তা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এই মামলা খারিজ করে দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয় এই দেশের সরকার, শাসকগোষ্ঠি পাহাড়ি জনগণকে শাসন-শোষণ ও বিচারহীনতার মাধ্যমে পদানত রাখতে চায়।

অমিত চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ নয়, দেশ-বিদেশের সকল প্রগতশিীল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। গতকালও সিএইচটি কমিশিন মামলা খারিজের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ’৯৬ সালে কল্পনা অপহরণের পর সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের দালাল-সুবিধাবাদীরা যেভাবে ঘটনাটি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল, একইভাবে চুক্তির পর সন্তু লারামাও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কল্পনা অপহরণ ঘটনাটি বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একজন নারী অধিকার কর্মীকে দেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহরণ ও অপহরণকারীদের বাঁচানোর যে প্রচেষ্টা এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার নামে নিয়োজিত সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীগুলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দমন-পীড়ন, গণহত্যা চালানো হয়েছে, মা-বোনের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন সংঘটিত করা হযেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে সে ইতিহাস আমরা ভুলে যাইনি। ২০১০ সালে এই বাঘাইহাটে লক্ষীপুদি চাকমারা প্রাণ দিয়েছেন সে ইতিহাস পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ভুলে যায়নি।

তিনি সম্প্রতি বান্দরবানে বম জাতিসত্তার ওপর অন্যায় দমন-পীড়নের ঘটনাও তুলে ধরে বলেন এই পরিস্থিতিতে আমাদের চুপ করে বসে থাকলে হবে না। সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যতদিন শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন-নর্িাতন থাকবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।

সমাবেশে শেষে উপস্থিত জনতা কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসসহ বিচারের নামে প্রহসনে লিপ্ত কুচক্রীদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।