Home সাহিত্য ও বিনোদন কবি প্রিয়তু শ্যামার তিনটি কবিতা

কবি প্রিয়তু শ্যামার তিনটি কবিতা

44

কবি প্রিয়তু শ‍্যামা দীর্ঘদিন যাবত কাব‍্য চর্চা করছেন। তাঁর বের হয়েছে অনেক গুলো কাব‍্যগ্রন্থ। সেখান থেকে তিনটি কবিতা এখানে দেওয়া হলো —

১. নববধূ শরৎ

নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা
মন ভিজানো শিউলিঝরা ভোর বেলা,
দূর্বাঘাসের ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির,
কাশফুলে মিষ্টি সোঁদা ভেজা মাটির গন্ধ।

দুপুরের তপ্ত
অথচ নরম নীলের প্রলেপের মাঝে শুভ্র মেঘেদের হুটোপুটি ছুটোছুটি।

বাঁশ বাগানে ডাহুকের কুঞ্জন,
ঝিলের ডুবো জলে শালুক পাতার বাস।

আঁধারের বুক চিরে জোনাকির রুপোলি বাতি,
ঘোরলাগা জ্যোৎস্না….!!!
সবই শরৎ-এরই রুপ,
এ যে নববধূ শরৎ-এরই আগমন ।
তবুও কেন শরৎ-এর এহেন আগমনী বার্তাকে,
মন ভুলানো রূপকে সবাই ছুঁতে পারে না,
সবার ছোঁয়া হয় না,
ছোঁয়া যায় না?

২. দৌড়

জীবনের রেইসে ছুটছি সে অনেক কাল ধরেই…
কিছু বোঝার বেশখানিকটা আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল দৌড়ের এই অলিখিত প্রতিযোগিতা।
তখন থেকেই মস্তিষ্ক শুধু একটি শব্দই শুনতে পেত,”দৌড় দৌড় দৌড়…”
কেবল ছুটে চলা…
অবিরাম দুরন্ত দুর্বার গতিতে ছুটে চলা…
তাই আমিও কখনো ঢেউয়ের মতো,
কখনো-বা পাখির মতো শুধু ছুটেই গেছি …

আমার মস্তিষ্কের কোষগুলো কখনো কখনো বিদ্রোহ করেছে, ককিয়ে কেঁদে উঠেছে,
হয়েছে অবসন্ন।
কিন্তু তবুও আমি একটিবারের তরেও থামিনি।
কারণ ততদিনে আমিও বুঝে গিয়েছিলাম যে,বাঁচতে হলে দৌড়েই বাঁচতে হবে।
প্রাণপণে শুধু ছুটতেই হবে,
গতিকে কখনো শ্লথ করা চলবে না।
জীবনে সন্ধ্যে নামার আগেই লক্ষ্যে পৌঁছোতে হবে।
সেই থেকে আজও কেবল ছুটে চলেছি…
থামব কোথায় ঠিকানা জানা নেই।

৩. নিঃশেষের আগে

কথা বলো…
মনে জমানো যা কিছু সঞ্চিত ,
বুকে বেঁধে রাখা,থমকে থাকা এক একটা সাদা-কালো, নীল-হলুদ সব কথাকে উগরে দাও।
নিঃশেষে বলে দাও যা কিছু অপ্রকাশিত তার সবটা।
কিচ্ছুটিও জমিয়ে রেখো না।
কথা অমৃত, একে বলে ফেলতে হয়।
আগামী অনিশ্চিত ক্ষণের জন্য কিছুকেই জড়ো করে রেখো না,
না সাধ,
না স্বপ্ন,
না না-বলা কোনো কথা!
কিছুকেই জমিয়ে রেখো না।
যা কিছু লালায়িত স্বপ্ন আছে,
সাধ আছে,
ইচ্ছের বাড়াবাড়ি আছে,
তার সবটাকে ভাসিয়ে দাও,
ঢেউয়ের মতো তা আছড়ে পড়ুক,
ফেনা তুলুক,
তারপর আবার মিলিয়ে যাক…
নিঃশেষের আগে বিলিয়ে দাও সঞ্চিত ইচ্ছের পুটলিখানি থেকে খান-কতেক অভিজ্ঞতা, উপলব্ধিকে।
যা কিছু শিখেছ তার সবটাকে মেলে ধরো।
সঞ্চিত সব কিছুকে নিঃশেষ করো তোমার নিঃশেষের আগেই।