Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানা সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করছে

এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানা সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদন করছে

34

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের ৫৭ শতাংশ শিল্পকারখানা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ৭৫ থেকে ১০০ ভাগ ব্যবহার করতে পারছে। ৩৫ শতাংশ কারখানা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে দেখা গেছে, ৭ দশমিক ১১ শতাংশ কারখানা তাদের উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকও উত্পাদন করতে পারছে না। কারখানাগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক। তাছাড়া শিল্পের দক্ষতাও এই উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহারের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে বৃহৎ ৫৭ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মাঝারি ৫৯ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পের মধ্যে যথাক্রমে ৫৪ ও ৫৮ শতাংশ করখানা তাদের সক্ষমতার ৭৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ ভাগ ব্যবহার করতে পারে। ‘দ্য সার্ভে অব ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএমই)-২০১৯’ শিরোনামে এই জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মোট ৮ হাজার ৫৩৩টি উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে। গত বছর প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হলেও সম্প্রতি এটি প্রকাশ করেছে বিবিএস। মূলত টেক্সটাইল (২৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ), খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ (২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ) এবং গার্মেন্টস শিল্প (১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ) দেশের প্রধান শিল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

জরিপে ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প ক্যাটাগরিতে উত্পাদন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করা হয়েছে। মূলত ১০ জনের বেশি এবং ২৪ জনের কম শ্রমশক্তি দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাইক্রো বা ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ২৫ জনের বেশি এবং ৯৯ জনের কম নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানকে ছোট, ১০০ জনের বেশি ও ২৫০ জনের কম এমন প্রতিষ্ঠানকে মাঝারি এবং ২৫০ জনের ওপরে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহৎ ক্যাটাগরিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

জরিপে বলা হয়েছে, মোট ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃহত্ ক্যাটাগরির। মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি হলো ছোট শিল্প ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং মাইক্রো বা ক্ষুদ্র শিল্প হলো ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োজিত রয়েছে উৎপাদনশীল খাতে মোট নিয়োজিত জনবলের মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মাঝারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। বৃহৎ শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ জনবল।

জরিপের ফোকাল কর্মকর্তা বিবিএসের উপপরিচালক লিজেন শাহ নঈম বলেন, গত বছর প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে, অর্থাত্ ২০১৯ সালের শিল্পকারখানাগুলোর সার্বিক অবস্থা এতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির ভিন্নতা হতে পারে। এটি হয়তো পরবর্তী জরিপে উঠে আসবে।

তিনি বলেন, আগের জরিপগুলোর তুলনায় এবারের জরিপে উৎপাদন পরিস্থিতি উন্নতি দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া শিল্প খাতে মূল্য সংযোজনও আগের চেয়ে বেড়েছে। এবারের জরিপে কারখানাগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হারও বেশি লক্ষ করা গছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দেশের শিল্প উত্পাদনের ৬০ শতাংশ পণ্য আসছে বৃহত্ শিল্প থেকে। ক্ষুদ্র শিল্পগুলো থেকে আসছে ২৪ শতাংশ এবং মাঝারি শিল্প থেকে আসছে ১২ শতাংশ পণ্য। সবচেয়ে কম মাত্র ৪ শতাংশ আসছে ক্ষুদ্র শিল্পগুলো থেকে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, তুলনামূলক নারী শ্রমশক্তি বেশি কাজ করছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে (৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ)। মাঝারি প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ছোট উৎপাদনশীল খাতের প্রতিষ্ঠানে ১৯ দশমিক ৫৩ এবং ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যত জনবল নিয়োজিত রয়েছে, তার ৮৭ দশমিক ৮১ শতাংশ সরাসরি উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, দাপ্তারিক ও বিপণন বিভাগে রয়েছে ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।

স্থায়ী সম্পদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০ শতাংশের স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে এই হার মাত্র ৪ শতাংশ। ছোট শিল্পের মধ্যে ১২ শতাংশ এবং মাঝারি শিল্পের মাত্র ১৪ শতাংশের স্থায়ী সম্পদ রয়েছে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৩ শতাংশ স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮২ দশমিক ৮ শতাংশ, মাঝারি শিল্পের ৬৩ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করছে। বৃহৎ শিল্পগুলো ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করছে।

অর্থাৎ বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করছে। উৎপানশীল প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার হয়, তার ৪৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ ব্যবহার করছে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। সার্বিকভাবে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে, তার মধ্যে বিদ্যুৎ ৪০ শতাংশ, প্রাকৃতিক গ্যাস ২৯ শতাংশ, কয়লা ১৭ শতাংশ এবং ডিজেল ৭ শতাংশ।

সার্বিকভাবে ৫৬ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান কারখানা চালাতে ঋণ সংগ্রহ করতে পেরেছে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭০ শতাংশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রয়েছে। ছোট শিল্পের মাত্র ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশের এই সুবিধা রয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে মাত্র ৩০ দশমিক ০৩ শতাংশের এই সুবিধা রয়েছে।

বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্য সংযোজন বাড়ছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ৭১ হাজার ৮২৩ কোটি ৯ লাখ টাকা মূল্য সংযোজন হয়, যা ২০২০-১১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৯৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এই মূল্য সংযোজন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।-ইত্তেফাক