Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি ঋণ নিয়ে কোনোমতে চলছে ৬৬ ভাগ মানুষ

ঋণ নিয়ে কোনোমতে চলছে ৬৬ ভাগ মানুষ

33

ডেস্ক রিপোর্ট: করোনা মহামারির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অনেকেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না। বরং কর্মহীন হওয়ায় ঐ সময়ে জীবনধারণের জন্য ঋণ নিয়েই সংসার চালিয়েছেন অনেকে। কেউবা আবার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতাও হারিয়েছেন। এ অবস্থায় কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে খাবার দেওয়ার যে ঘোষণা এসেছে তার সঠিক বাস্তবায়ন ও প্রক্রিয়াগত দিক ঠিক করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল সোমবার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তারা। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জরিপ রিপোর্টটি উপস্থাপনকালে বলা হয়, ২০টি জেলার ৪০টি উপজেলার দেড় হাজার পরিবারের ওপর এই জরিপ চালনা হয়। গত বছরের তিনটি প্রান্তিকে তথা জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপে বলা হয়, জুন মাসে ৬৬ শতাংশ পরিবার জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য ঋণনির্ভর হয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে এসে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৪৯ ও ৩৪ শতাংশে। তবে ঋণনির্ভরতা কমেছে আয় বৃদ্ধির কারণে নয়। অধিকাংশই ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সিপিজের গবেষণা সহযোগী নাহিদা আক্তার বলেন, ঋণ নেওয়ার অর্থ এই নয় যে ঐ পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো হয়েছে। বরং অনেকে আগের ঋণ শোধ করতে পারেনি, তাই ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী একজনকে উদ্ধৃত করে তিনি জানান, ঐ পরিবারে দুজন বেসরকারি খাতের কর্মী। তাদের বেতন বাড়েনি। ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়ার এই সময়ে খাপ খাইয়ে চলতে পারছেন না। উপরন্তু, ঋণের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। তা পরিশোধ কীভাবে হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন।

জরিপে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে ঋণ নিয়ে ঐ টাকার এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করেছেন খাদ্যপণ্য কেনাকাটায়। বাকি টাকা ঋণ পরিশোধে, ওষুধ কেনা ও চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর কাজে খরচ হয়েছে। প্রান্তিক এই মানুষেরা শুধু ঋণই নেননি, তারা সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করেছেন। কম মজুরিতে যুক্ত হয়েছেন, কম খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সামিল ছিলেন।

জরিপে বলা হয়, স্কুলগামী শিশুদের শিক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাত্মকভাবে। এই হার জুন ও সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে এসে বেড়েছে ৫৭ শতাংশে।

‘করোনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রণয়নে প্রান্তজনের কণ্ঠস্বর’ নামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিপ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সিপিজের সিনিয়র গবেষক মুন্ময় সমাদ্দার, গবেষণা সহযোগী নাহিদা আক্তার ও হোসেইন মোহাম্মদ ওমর খৈয়াম। জরিপ কাজে সহযোগিতা করেছে বৃটিশ সরকারের কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের কোভিড কালেকটিভ।

এতে অতিথির বক্তৃতা করেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, সরকার ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে খাবার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটি ভালো পদক্ষেপ। তবে কোন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিলে প্রকৃতই যাদের সরকারের সহায়তা দরকার, তারা পাবেন—সেটি ঠিক করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিজের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান।-ইত্তেফাক