ডেস্ক রিপোর্ট: ওপেক সদস্য দেশগুলো দিনে কি পরিমাণ তেল উৎপাদন করবে তা নিয়ে সৌদি আরব ও আমিরাত মতবিরোধে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এ দুটি দেশ দীর্ঘদিন ধরে ওপেকের প্রভাশালী সদস্য দেশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে মিত্রতা বজায় রেখেছিল। কিন্তু এ দুটি দেশের মধ্যে মতবিরোধে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আগামী মাসে তেলের সরবরাহ কতটা থাকবে তা নিয়ে ওপেকের দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর ব্যারেল প্রতি উঠেছে ৭৫ ডলারে। সৌদি আরব ও আমিরাত ওপেকের দুটি তেল উৎপাদনকারী সদস্য দেশ। কিন্তু দুটি দেশের রাজপরিবারের মধ্যে বিরোধ তেল উৎপাদনের সংকটকে আরো বৃদ্ধি করেছে। ব্লুমবার্গ

সৌদি আরব চাচ্ছে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে। ওপেকের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র ও রাশিয়া সৌদি আরবের সঙ্গে একমত। তেলের মূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে সে কারণে আমিরাত আন্তর্জাতিক বাজারে কোভিড মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাহিদা অনুযায়ী তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলছে। সৌদি জালানিমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুলআজিক বিন সালমান ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন আমরা তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে। এতে তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির বিবেচনা করতে পারছে না আবুধাবি। ফলে আমিরাতের বিপক্ষে ওপেকের সদস্য দেশগুলো অবস্থান নিয়েছে যা দুঃখজনক কিন্তু এটাই বাস্তব। এর এক ঘন্টা আগে আমিরাতের তেল জালানিমন্ত্রী সুহায়েল আল-মাজরোয়েই তেল উৎপাদন বৃদ্ধি চুক্তি বর্ধিত করার পক্ষে তার দেশের বিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন আমরা দীর্ঘমেয়াদে নয় বরং স্বল্পমেয়াদে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা দেখার পক্ষপাতি। আর তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে তা যে কোনো শর্তহীন উপায়ে করতে চাই। তবে তেলের উৎপাদন নিয়ে ওপেক কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

ওপেক দেশগুলো তেলের মূল্য স্থির করে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না পর্যন্ত তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এর ফলে বাজারে তেলের মূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর এ মুহুর্তে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিকে আরো চাঙ্গা করবে। আমিরাত এও বলছে গত এপ্রিলে ওপেক সদস্যগুলোর তেল উৎপাদন দিনে ৩২ লাখ ব্যারেলে নির্ধারিত ছিল। এটি অন্তত ৩৮ মিলিয়ন ব্যারেল নির্ধারণ করে আগামী বছর পর্যন্ত একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সৌদি আরব ও রাশিয়া আমিরাতের এধরনের তেল বৃদ্ধির প্রস্তাবকে নাকচ করে বলেছে দরকষাকষির মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যেতে পারে। এদুটি দেশ চায় আগামী আগস্ট ও ডিসেম্বর নাগাদ দিনে ২০ লাখ তেল উৎপাদনের চুক্তিতে যাওয়া প্রয়োজন।

এদিকে তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ইরান দিনে তেল উৎপাদন দুই লাখ ব্যারেল বাড়াতে পারলে দেশটির আয় দুই হাজার বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে জানিয়েছেন ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান নামদার জাঙ্গানে। তিনি রোববার বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা খুব সহজে দিনে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে পারি যা দেশের জন্য দুই হাজার বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিতে পারবে। জাঙ্গানে বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ ইরানের পক্ষে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করা সম্ভব যার অর্থ অতিরিক্ত দুই হাজার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয়।ইরানের তেলমন্ত্রী বলেন, এই আয় দিয়ে আমরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করব, আমাদের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে এবং মাথাপিছু আয়ও বেড়ে যাবে।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইরানের তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ থাকার পর আবার এই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে জাঙ্গানে বলেন, ইরানের তেল আবার রপ্তানি শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক নিতে পারবে। ইরানের তেলমন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নিষেধাজ্ঞা চলার সময় ইরানের তেল খাতে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কাজেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ইরান তেল রপ্তানির দিক দিয়ে নিষেধাজ্ঞা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে।-আমাদের সময়.কম