Home রাজনীতি আ.লীগ জনগণের সরকার নয়, বিদেশী আর্শীবাদপুষ্ট সরকার : গয়েশ্বর

আ.লীগ জনগণের সরকার নয়, বিদেশী আর্শীবাদপুষ্ট সরকার : গয়েশ্বর

15

স্টাফ রিপোটার: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জনগণের সরকার নয়। তারা চীন, ভারত ও রাশিয়ার সরকার। এরা বিদেশী আর্শীবাদপুষ্ট সরকার। সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতেই হবে। এই সরকারকে আমরা মানতে বাধ্য নই। এটা আমাদের ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। সুতরাং প্রতিরোধের আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল, খালেদা জিয়া সহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির এক দফা দাবিতে এই কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করে বিএনপি। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এটাই বিএনপির বড় কর্মসূচি। পতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোডাউন করে দলটি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের সঞ্চালনায় মিছিল পূর্ব বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আজকে জিনিস পত্রের দাম অতিমাত্রায় বৃদ্ধি। দেশের মানুষ দিশেহারা। ঘরে ঘরে অভাব। দিনমজুর মানুষ আগের মতো পেট ভরে দুবেলা খেতে পারেনা।
তিনি বলেন, দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আর তারা নাকি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন করেছে। আসলে এই ধারাবাহিকতা তাদের লুটপাট ও মহাদুর্নীতির কারণে। দশ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। যারা পাচার করেছেন তারা কিন্তু অস্বীকারও করেনা। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজকে ৬শ‘র বেশি সংসদ সদস্য। এরমধ্যে তারা নতুন সরকার গঠন করেছে।এটা তো আইনের লঙ্ঘন। আবার ওবায়দুল কাদের বলছেন বিরোধী দল কারা হবে?

গয়েশ্বর বলেন, নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে গণভবনে ঘন ঘন বৈঠক করেছে। তৃণমূল দল করলো। কিন্তু সেটাও ছাগলে খেয়ে ফেললো। আজকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইডি কার্ড নিয়ে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়েছে। সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের কার্ড নিয়ে জোরকরে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে শিয়াল কুকুর ছাড়া কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় নি।
তিনি আরও বলেন, সেদিন একজন বিজিবি সদস্যকে হত্যা করেছে। কেনো কীসের অধিকারে তারা এটা করছে? কেনো একটা প্রতিবাদ নেই? আজেকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। কারণ অন্য কেউ যখন দেশের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তো আমার সার্বভৌমত্ব থাকে না।

গয়েশ্বর বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাত পার্সেন্ট ভোটের মালিক। আর ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতা তারেক রহমান। সরকারের মানসম্মান ও লাজ শরম থাকলে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দেন। দেখেন ১ শতাংশ ভোট পান কি না?

গয়েশ্বর আরও বলেন, সরকার কেবলই লুটপাট করে। তারা চায়না থেকে টাকা এনে ১০ টাকা খরচ করে আর ভাউচার লেখে ২০০ টাকা। এই লুটপাট দেশের মানুষ মানতে পারেনা। আমরা রাজপথে আছি এবং রাজপথেই থাকবো। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যদি মৃত্যু হয় হবে। শিয়াল কুকুরের মতো বাঁচতে চাই না। সিংহের মতো বাঁচতে চাই। আমাদের কতো মারতে পারবেন মারেন না! তারপরও আপনার ধ্বংস অনিবার্য।

সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির কি দায় পড়েছে যে হিন্দু বাড়িতে লুটপাট করবো?

তিনি আরো বলেন, আমাদের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ। আমাদের নেতা তারেক রহমান। যিনি ৭ জানুয়ারি দেশের ১৮ কোটি মানুষের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি অবৈধ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন রাজপথে আবারও কালো পতাকা মিছিল হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘সমকামী‘ নির্বাচন বলে অভিহিত করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন! আর যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করলেন তখন কি হয়েছিলো? তাহলে প্রধান বিচারপতির পদটা কতটা কলঙ্কিত করলেন?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে রাজপথে নেমেছি। সরকার কালোপাতাকার কালো চিহ্নে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। গত ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ এই সরকারকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সেদিন সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তারা সেদিন পুলিশ দিয়ে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করেছে। সরকার যত শতাংশ ভোট দেখাতে চেয়েছিলে সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোট কাস্টিং দেখিয়েছে। সুতরাং কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেটি কথা নয়। সেদিন কোনো ভোট হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। বিএনপি দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। কারণ এই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। জনগণ কখনোই বাকশালী শাসন মানেনি এবং মানবেনা।

মঈন খান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কারো কাছে মাথা নত করতে নয়। দিল্লির শাসন দিয়ে কোনোদিন বাংলাদেশ চলেনি আজকেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগ ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ায় দেশ শাসন করছে। তারা দেশে বিভাজন তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের সুমতি ফিরে আসুক যে তারা বাকশাল থেকে পিছু হটবে। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে ছিলাম এখনো আছি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয়, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কাদের গণি চৌধুরী, রফিক শিকদার, ঢাকা জেলা বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক, নিপুন রায় চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নাজমুল হাসান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ওলামা দলের শাহ মো. নেছারুল হক, কাজী মো. সেলিম রেজা, ছাত্রদলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দল, মতস্যজীবী দল, জাসাসের হাজারো নেতাকর্মী কালো পতাকা হাতে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।