Home জাতীয় আগস্ট মাসে দেশে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫১৯ জন ও আহত ৯৬১

আগস্ট মাসে দেশে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫১৯ জন ও আহত ৯৬১

32

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি : গত আগস্ট মাসে দেশে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৯ জন নিহত এবং ৯৬১ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৪, শিশু ৬৯। ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭২ জন, যা মোট নিহতের ৩৩.১৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯.৯৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪ জন, অর্থাৎ ১৮.১১ শতাংশ।

এই সময়ে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ২৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৭২ জন (৩৩.১৪%), বাস যাত্রী ২১ জন (৭.০৪%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৫ জন (৮.৬৭%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ যাত্রী ২৯ জন (৫.৫৮%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার) ১০১ জন (১৯.৪৬%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ি)২৩ জন (৪.৪৩%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান আরোহী ১৯ জন (৩.৬৬%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৭টি (৪০.৮২%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৫২টি (৩৩.১৮%) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৯টি (১৭.২৪%) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩১টি (৭.৭৬%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৯টি ১.৯৬% সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৭২টি (১৫.৭২%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১১টি (৪৬.০৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৩টি (২৪.৬৭%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪৬টি (১০.০৪%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৬টি (৩.৪৯%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-প্রিজনভ্যান ২৩.৭৩%, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩.৫৪%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৫.১৮%, যাত্রীবাহী বাস ১৪.৭৩%, মোটরসাইকেল ২৬.৪৬%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার) ১৭.৮৭%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন-(নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-ইট ভাঙ্গার মেশিন গাড়ি) ৫.৩২%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-প্যাডেল ভ্যান ৩.১৩%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৩৩ টি। (ট্রাক ১২২, বাস ১০৮, কাভার্ডভ্যান ২৩, পিকআপ ২৮, প্রিজনভ্যান ১, ট্রলি ৮, লরি ১৪, ট্রাক্টর ৪, মাইক্রোবাস ৭, প্রাইভেটকার ২১, অ্যাম্বুলেন্স ৫, জীপ ৫, মোটরসাইকেল ১৯৪, থ্রি-হুইলার ১৩১ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-হিউম্যান হলার), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৯ (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-ইট ভাঙ্গার মেশিন গাড়ি) বাইসাইকেল ১২, প্যাডেল রিকশা ৩ এবং প্যাডেল ভ্যান ৮ টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৫৮%, সকালে ২৮.৮২%, দুপুরে ২২.২%, বিকালে ১৮.৫৫%, সন্ধ্যায় ৫.৬৭% এবং রাতে ২০.০৮%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.৭২%, প্রাণহানি ২৭.৩৬%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.২৮%, প্রাণহানি ১৫.২২%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২১.৬১%, প্রাণহানি ২১.৫৭%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.০৪%, প্রাণহানি ৯.৮২%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৮০%, প্রাণহানি ৫.৭৮%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.১৪%, প্রাণহানি ৪.০৪%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৯৫%, প্রাণহানি ৮.৮৬% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৪২%, প্রাণহানি ৭.৩২% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১২৭টি দুর্ঘটনায় ১৪২ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩২ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে মাগুরা, ঝালকাঠি ও সুনামগঞ্জ জেলায়। এই ৩টি জেলায় ৭টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

রাজধানী ঢাকায় ২৬ টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছে।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পেশাগত পরিচয়:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৯ জন, সেনা সদস্য ২ জন, বিজিবি সদস্য ১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৭ জন, চিকিৎসক ২ জন, প্রকৌশলী ৩ জন, সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ২ জন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১২ জন, বন কর্মকর্তা ২ জন, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ৬ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ২৩ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩৭ জন, পোশাক শ্রমিক ৬ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, রং মিস্ত্রি ২ জন, প্রবাসী ৩ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১১ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। ১৮ জন পুলিশ এবং ২ জন সেনা সদস্য আহত হয়েছে।