Home রাজনীতি আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি: জিএম কাদের

আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি: জিএম কাদের

27

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সরকার ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্ত করেছে। আওয়মী লীগ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি মিলবে। আওয়ামী লীগ না হলে তাদের জন্য কিছুই নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি নামেও বিভাজন চলছে। দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। মুক্তির জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে, সেই সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। স্বাধীনতা পেলেও আমরা মুক্তি পাইনি। আবার স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি নামেও বিভাজন করা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে কিছু মানুষ ছিলো, তাদের অনেই মারা গেছেন। অনেকের ফাঁসি হয়েছে। এখন নতুন প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ ধুয়া তুলে বিভাজন কেন? আবার মুক্তিযোদ্ধা আর অমুক্তিযোদ্ধা ইস্যুতেও বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মকে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কেউ কেউ শিশু ছিলো তাদের আওয়ামী লীগ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দলে টানতে চাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষদের থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আলাদা করতে চাচ্ছে। এই বিভাজনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। বিভাজন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে বৈষম্য করেছে। তাই, আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি।

আজ দুপুরে মুন্সিগঞ্জের জুবিলী রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেস চত্বরে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের একথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে আওয়মী লীগ প্লাস তন্ত্র চলছে। যেখানে আওয়ামী লীগের সাথে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, সংসদ ও কর্ম কমিশন সহ সবাই অন্তুর্ভক্ত। তাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে দলীয় কর্মী বানিয়েছে। পুলিশ বলে আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কীভাবে পুলিশের প্রার্থী হয়? এইভাবে সবাই মিলে দেশে আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র চালু করেছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে জনগনের তন্ত্র আর রাজতন্ত্র মানে রাজার তন্ত্র। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগনের জন্য জনগণ সরকার তৈরী করবে। যারা জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। এখন আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্র চলছে। তারা আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্রের জন্য সরকার তৈরী করে, আওয়ামী লীগ প্লাসের স্বার্থ রক্ষায় তারা কাজ করছে। আওয়ামী লীগ প্লাস তন্ত্র চালু করে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করছে। আওয়ামী লীগ প্লাসতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষের হতে পারে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থি। হাজার বছর ধরে দেশের মানুষ বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে মুক্তি সংগ্রাম করে আসছে। আমরা অত্যাচার ও নিপিড়ন থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মুক্তি আমরা পাইনি। কোন ভালো কাজই সহজভাবে সম্পন্ন হয় না। ভালো কাজের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা যেকোন ত্যাগ স্বীকার করবো।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ দুরাবস্থার মধ্যে আছে। বাংলাদেশ এখন খাদের কিনারায়, যে কোন সময় ধংস হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। সরকারের কাছে রিজার্ভ নেই, রিজার্ভের যে হিসাব সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি ঋণ করা হয়ছে। তার সুদ ও আসল পরিষোধ করলে বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। এখন ধার করে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার পূরণ করা হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ থেকে কিছু টাকা পাওয়া যাবে বলে সরকার এখনো বেঁচে আছে। সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, দেশীয় মুদ্রাও সরকারের হাতে নেই। দেশের ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যাক্তির হাতে দেয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে লক্ষ-লক্ষ কোটি বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। দেশের বাংকে কোন টাকা নেই, সরকার সাধারণ মানুষের গলায় গামছা লাগিয়েও কর আদায় করতে পারছে না। চাকরিজীবীরা বেতন দিয়ে আগের তুলনায় অর্ধেকের কম বাজার করতে পারছেন। দেশের মানুষ মাছ ও মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ জীবন রক্ষাকারী অসুধ ও শিশু খাদ্যও কিনতে পারছে না। খরচ চালাতে না পেরে হাসপাতাল থেকে রুগী বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। তিনি বলেন, মানুষের গলায় গামছা লাগিয়ে যেটুকু ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে তাতে সরকারের সাজসজ্জা ও জাকজমকপূর্ন লাইফস্টাইল চলছে না। তাই, সরকার নতুন করে টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। এতে দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, ফলে সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুত নেই, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ দোকানদার, রিক্সাওয়ালা ও স্কুটার চালকরা বাঁচতে পারছে না। বাজেট হয়েছে কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছুই নেই। সরকার কী রেশন কার্ড করে সাধারণ মানুষ বাঁচাতে কোন উদ্যোগ নিয়েছে?
মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় ও সদস্যসচিব জানে আলম এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন – জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ জামাল হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ নোমান মিয়া, জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন -মোঃ হান্নান খান, আব্দুল হাকিম,শেখ মুহাম্মদ মুজাহিদুল হক, ইসমাইল হোসেন রাহাত, দেলোয়ার হোসেন খান বাদল , মোঃ আসাদুজ্জামান বাবুল,আরিফ উজ্জামান দিদার।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন – প্রেসিডিয়াম সদস্য – মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এডভোকেট জহিরুল হক, মাসরেকুল আজম রবি, ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমান খান, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে মোঃ হুমায়ুন খান, এম এ, রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন দেওয়ান ,এম এ সোবহান, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ সামছুল হুদা মিয়া, জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – আলহাজ্ব মোঃ জয়নাল আবেদীন,গোলাম কাদির, ফারুক আহমেদ, মোঃ রফিক উল্লাহ সেলিম, মোঃ নূর হোসেন, মোঃ মোনায়ম হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিদুল ইসলাম, কাঁকন, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জান্নাতুল আসাদ ওনশি, হাজি মোহাম্মদ লিয়াকত খান।