Home জাতীয় পশ্চিমরেলের টিকেট ভাগাভাগির ভিডিও ভাইরাল, মূল হোতাদের আড়ালে রাখার অপচেষ্টা

পশ্চিমরেলের টিকেট ভাগাভাগির ভিডিও ভাইরাল, মূল হোতাদের আড়ালে রাখার অপচেষ্টা

32

মো.পাভেল ইসলাম রাজশাহী: পশ্চিম রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী রেল স্টেশনে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা টিকেট কালোবাজারির টিকেট ভাগবাটোয়ারা নিয়ে স্টেশন ম্যানেজারের রুমে হট্টোগোলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, দীর্ঘ দিন থেকে স্টেশনকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিম রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা ও স্টেশনে দায়িত্বরত টিকেট সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি দূর্ভেদ্য সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে অন্তরকোন্দলের কারণে একজন শ্রমিক নেতাকে গত সোমবার (১৮ জুলাই) স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম ব্যক্তিগতভাবে টিকেট দিতে চেয়ে পাঁচবার ঘুরিয়ে, পঞ্চমবারে রাত আনুমানিক ১০ টায় টিকেট দিতে অস্বীকার করলে ঐ শ্রমিক নেতা আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে স্টেশন ম্যানেজারকে গালাগালি করেন। ঘটনার সময় দু’জন সংবাদ কর্মীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে ঘটনা সোমবার হলেও সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় মঙ্গলবার রাতে।

রাজশাহী-সহ সারাদেশে রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট কালোবাজারির কারণে দীর্ঘদিন থেকেই সাধারণ যাত্রীদের জন্য টিকেট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। আর সাধারণ মানুষ যখন এরকম হয়রানির চরম পর্যায়ে, ঠিক সেসময় এরকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ নিয়ে চলছে চরম আলোচনা সমালোচনা। তবে টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মূল হোতারা সবসময়-ই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কেউ কেউ ধরা পড়লেও তারা শুধুমাত্র খুচরা কারবারি বলে জানা যায়। আর এঘটনাকে শুধুমাত্র ঐ শ্রমিক নেতা ও স্টেশন ম্যানেজারের ব্যক্তিগত গোলমাল বলে চালিয়ে দিতে দৌড়াদৌড়ির তৎপরতা চালাচ্ছেন টিকেট কালো বাজারির মূল হোতারা।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে গালাগালি করতে দেখা শ্রমিক নেতার নাম দেবব্রত সিনহা দেবু। তিনি পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী ও রেল শ্রমিকলীগের আরবিআর শাখার যুগ্ম সম্পাদক। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এক আত্মীয় অসুস্থ ; তিনি চিকিৎসা করাতে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা যাবেন। কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে আমি স্টেশন ম্যানেজার স্যারের কাছে যাই। প্রথমবার তিনি বলেন ১১ টার দিকে আসেন, ১১ টার দিকে গেলে তিনি ২ টার পর যেতে বলেন। এভাবে তিনি আমাকে মোট পাঁচবার ঘুরিয়ে রাত ১০ টার সময় বলেন সরি, আমি টিকেট দিতে পারবো না। কিন্তু তিনি অনেককেই সারাদিনে একাধিক টিকেট দিয়েছেন, তা আমার জানা। এদিকে রেলওয়েতে চাকরি করে না এমন ব্যক্তিকেও সে টিকেট দিয়েছে। যেহেতু আমি একজন রেল কর্মচারী এবং একজন শ্রমিক নেতা, আমার সাথে এমনটি করা তার উচিৎ হয়নি। রাগ সহ্য করতে না পেরে আমি খারাপ ভাষায় গালাগালি করেছি। কিন্তু এটা যে ঠিক হয়নি সেটা পরে বুঝতে পেরে অনুতপ্তও হয়েছি।

এদিকে ট্রেনের টিকেট না পেয়ে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের ঘরে যেয়ে এই গালাগাল করার ঘটনায় রেলওয়ে জিআরপি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন এই জিডি করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সিসি টিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গত ১৮ জুলাই টিকেটের জন্য দেবব্রত সিনহা ৩ বার (সকালে একবার ও বিকালে দুইবার) অফিসের ভেতরে প্রবেশ করেন।

জানতে চাইলে, রাজশাহী রেলস্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, সেদিনকার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমার অফিস রুমে বেশ কয়েকজন রেল কর্মচারি টিকেট না পাওয়াকে কেন্দ্র করে হট্টোগোলে জড়ায়। বিষয়টি নিয়ে রেলের উর্ধতন কর্তৃপক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে আমি জানি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের স্টেশনে কোন রকম টিকেট কালোবাজারি বা সিন্ডিকেট নাই। এসব মিথ্যা অভিযোগ। তাছাড়া রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা,রেলওয়ে থানা ও আরএনবি’র উর্ধতন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে সজাগ রয়েছেন সব সময়।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালোবাজারির টিকেট বিক্রির সময় স্টেশনের প্লাটফর্মে জিয়াউর রহমান (৩৬) নামে রেলওয়ের এক কর্মচারিকে আটক করেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)। এসময় ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ৫টি কালোবাজারির টিকেটও জব্দ করা হয়। আটককৃত কর্মচারি রাজশাহী মহানগরীর রেল কলোনি এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং পশ্চিম রেলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে বার্তাবাহক হিসেবে কর্মরত। পরে অবশ্য মুচলেকায় ছাড়া পায় সে। টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম অসীম কুমার তালুকদার। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

শুধু রেলের এই দুই কর্মচারিই নন; রেলওয়ের বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাও এই টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি জানিয়েছেন।