Home জাতীয় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চাই রাজনৈতিক সমঝোতা

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চাই রাজনৈতিক সমঝোতা

31

সংবাদ সম্মেলনে সুজন

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপের আশঙ্কা প্রকাশ করে তা থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতার ওপর জোর দিতে বলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। নাগরিক সংগঠনটি জানিয়েছে, দেশ চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যাচ্ছে। এর থেকে বের হওয়া কঠিন হবে। এই দুঃসময়ের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। ফুটো কলসিতে পানি যতই ঢালা হোক, তাতে যেমন কলসি ভরবে না, তেমনি দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের লাগাম টানা সম্ভব না হলে আইএমএফের ঋণও অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান করতে পারবে না।
মঙ্গলবার সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘কেবল অর্থনৈতিক সংস্কার নয়, সংকট সমাধানে প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় রাজনীতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ, সংবিধানসহ ২১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দেয় সুজন। সংগঠনের সহ-সভাপতি সাবেক বিচারপতি এম এম মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বক্তব্য রাখেন নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আহসান এইচ মনসুর ও ড. তোফায়েল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন যদি সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না যায় তাহলে বড় আকারে জাতীয় ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এর থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। রিজার্ভের পরিমাণ যাতে আর না কমে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরার সময় বলেন, দেশে এখন তিনটি মূল সমস্যা। এগুলো হলো—অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের সমস্যা। অথচ এই তিনটি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটির সমাধান সম্ভব নয়। দেশে সত্যিকার অর্থে কোনো বিরোধী দল নেই। ব্যাপকভাবে দলীয়করণের কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামো ভেঙে গেছে। সমস্যাগুলো আরো প্রকট হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা মহামারির কারণে। চলমান সংকট কাটাতে রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ঘাটতি পূরণ করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফুটো কলসিতে পানি যতই ঢালা হোক, কলসি খালি থেকেই যাবে। একইভাবে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত না এনে এবং সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের লাগাম টানা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক সংকট থেকেই যাবে। আইএমএফের ঋণ এই সংকটের সমাধান করতে পারবে না।
বদিউল আলম বলেন, গণতন্ত্রের প্রধানতম অনুষঙ্গ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি এক তরফা নির্বাচনের কারণে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। আগের মতো প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতাসীনদের জনগণের কাছে ‘ভোট ভিক্ষার’ জন্য যাওয়ার প্রথা ভেঙে গিয়েছে। অর্থাৎ ‘নির্বাচিত’ হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের আর জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না। তাই সরকারের আর জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজ করার দায়বদ্ধতাও নেই। যারা তাদের ক্ষমতায় এনেছে ও ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে যাদের ওপর নির্ভর করতে হবে, সরকারকে সেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরই সন্তুষ্ট রাখতে হয়।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। সাবেক বিচারপতি এম মতিন বলেন, পজিশন-অপজিশন যাই হোক, তাদের সবাইকে বসে সমাধান করতে হবে। রাজপথে সমাধান হবে না। তিনি বলেন, যারা ঋণখেলাপি তাদের কী সামাজিকভাবে বয়কট করা যায় না? পাচার করা টাকার দায়বদ্ধতা কার? সংবাদ সম্মেলনে ২১ দফা সংস্কার প্রস্তাব করা হয়।
ইত্তেফাক