স্টাফ রিপোটার: আজ ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার শুভ উদ্বোধন হলো ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’। বিকেল ৩টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা-এর শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
স্বাগত ভাষণে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি অবিভাজ্য সত্তার নাম। সেই কারণেই বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে মোঃ আবুল মনসুর বলেন, এবারের বইমেলার ব্যাপ্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যায়, পাঠক তার পছন্দমতো বই সুন্দর পরিবেশে সংগ্রহ করতে সÿম হবেন এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
প্রকাশক প্রতিনিধি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, কাগজের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে সৃজনশীল প্রকাশনা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।
বিশেষ অতিথি কে এম খালিদ এমপি বলেন, প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজন করে থাকে। কোভিড ১৯-এর কারণে গত দুইবছর বইমেলা আয়োজনে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে এবার যথাসময়ে বইমেলা শুরু হওয়ায় লেখক-পাঠক-প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সবাই আনন্দিত।
সভাপতির ভাষণে সেলিনা হোসেন বলেন, বইমেলার প্রসঙ্গ আসলে বইয়ের প্রসঙ্গ আসে। আমাদের অবশ্যই বাংলা ভাষার সেরা বইগুলো ইংরেজিসহ উল্লেখযোগ্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদ করতে হবে।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য বাংলা একাডেমির উদ্যোগে দেশ-বিদেশের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সাহিত্যমেলা বা সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। বইপড়ার অভ্যাস বৃদ্ধির জন্য সারাদেশে আঞ্চলিক সাহিত্যমেলা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, পরিবর্তিত বই-বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের অডিও বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে বাংলা ভাষায় রচিত গুরুত্বপূর্ণ বইপত্র ইংরেজিসহ উলেøখযোগ্য বিদেশি ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন গ্রন্থের গ্রন্থ-উন্মোচন করেন। বইগুলো হলো- শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি ১ম খন্ড, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আত্মজীবনী আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি, মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পাদিত চারটি বই- অসমাপ্ত আত্মজীবনী : পাঠ-বিশ্লেষণ, কারাগারের রোজনামচা : পাঠ-বিশ্লেষণ, আমার দেখা নয়াচীন : পাঠ-বিশ্লেষণ, জেলা সাহিত্যমেলা এবং প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সাবিত্রী উপাখ্যান উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ দি ম্যাটার অব সাবিত্রী।
বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন: কবিতা-ফারুক মাহমুদ, তারিক সুজাত, কথাসাহিত্য- তাপস মজুমদার, পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণা- মাসুদুজ্জামান, অনুবাদ- আলম খোরশেদ, নাটক- মিলন কান্তি দে, ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্য- ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা- মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গবেষণা-সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান-মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনি- ইকতিয়ার চৌধুরী, ফোকলোর- আবদুল খালেক, মুহম্মদ আবদুল জলিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকগণের হাতে হাতে তিন লক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তী এবং ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।
বইমেলা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা পরিদর্শন করেন।