Home রাজনীতি অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত নাহিদ!

অনুসারীদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত নাহিদ!

518

সৈয়দ রাসেল আহমদ,সিলেট অফিস: বেশ কিছুদিন ধরে গোলাপগঞ্জে সুরমা নদী থেকে কয়েকটি চক্র বালু উত্তলন করে আসছে। এর মধ্যে তারা নদীর কিছু কিছু অংশ লিজ নিলেও বেশিরভাগ সময় রাতের আঁধারে অথবা ভোরে লিজের বাহিরের নদীর তীরের অংশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তলন করে আসছে। এতে গোলাপগঞ্জের বেশ কিছু এলাকা নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে, এতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।

উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের খালপার গ্রামে এবছর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দুটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে,ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১০০ টি পরিবার। এমনিতেই ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো যখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে চিন্তিত, তখন এসব বালু উত্তলনের কারণে সহায়সম্বলহীন মানুষগুলোর কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

এবছর তীব্র মাত্রায় নদী ভাঙ্গনের ফলে নদী পারের মানুষদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাঘা ইউনিয়নের খালপার গ্রাম ভয়াবহ মাত্রায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। যাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে তারা কেউ কেউ অন্যের জমিতে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছেন,তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাদের।

একদিকে যখন চলছে নদী ভাঙ্গন অন্যদিকে বৈধ-অবৈধ দুই উপায়ে চলছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন। একদিকে যখন বালু উত্তলন করা হচ্ছে নদীতে অন্যদিকে চোখের পানি ফেলছে এসব পরিবারের লোকজন।

বাঘা ইউনিয়নের দরিদ্র সীমার নিচে থাকা গ্রামগুলোর মধ্যে খালপার অন্যতম। নদীরপাড়ে এদের বসবাস, নদী থেকেই জীবিকা নির্বাহ করে তারা,আর সেই নদীর চোখ রাঙানো দেখতে হয় প্রতিবছর। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এবছর প্রস্থে প্রায় ২০-৩০ ফুট জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। যেসব জায়গায় ঘর ছিলো,যাওয়া আসার রাস্তা ছিলো এসব এখন আর কিছুই নেই।

এর কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলাকেই দায়ী করছেন জনগণ। তাদের দাবী ভাঙ্গনের বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি,নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি,যার কারণে শ’খানেক পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা। স্থানীয়দের দাবী ভাঙ্গন প্রতিরোধে যদি কিছু ব্লক অথবা বালির বস্তার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে কিছুটা হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এর মধ্যে সিলেট ৬ আসনের এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদের নাম ভাঙ্গিয়ে কয়েকটি চক্র ড্রেজার দিয়ে বাঘা থেকে তুরুকভাগ পর্যন্ত বালু উত্তলন করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমন কি কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়ার চেস্টাও চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুধু বালু উত্তলন নয়,নুরুল ইসলাম নাহিদের নাম ভাঙ্গিয়ে নলুয়া গ্রাম এলাকার বোরহান উদ্দিন সড়কে বালু পরিবাহিত করার জন্য বড় একটি বাঁধ নির্মাণ করে যাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর দিয়ে ইট ভাটায় মাঠি পরিবহন করে সড়কে ধুলাবালির সৃষ্টি করা হয়,বৃষ্টি হলে এসব ধুলাবালি কাঁদায় পরিনত হয়ে সড়কে যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ এসব কর্মকাণ্ড যারা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছেন তারা সিলেট ৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের অনুসারী পরিচয় দিয়েই এসব কর্মকাণ্ড করে আসছেন।

একদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচন,অন্যদিকে এ সময় তার অনুসারীদের এমন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত সাধারণ জনগণ। স্থানীয়দের দাবি এসব কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষের আস্থা হারাতে পারেন তিনি।

তবে সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এবিষয়ে কতটুকু জানেন তা জানতে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমি কোন অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেইনি,এখনও দিব না। আমি কাউকে অনুমতি দেইনি আমার নাম ভাঙ্গিয়ে অন্যায় কাজ করতে। আমি গোলাপগঞ্জ থানার ওসিকে বলে রেখেছি,যে আমার নাম ভাঙ্গিয়ে অন্যায় কাজ করবে তার বিরুদ্ধে একশন নিতে।পাশাপাশি তিনি বলেন যারা অবৈধভাবে বালু উত্তলন করছে তাদের বিষয়েও ওসি,এসিল্যান্ডকে বলে রেখেছি তারা যেন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে।

এবিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসার অভিজিৎ চৌধুরী বলেন,লিজের বাহির থেকে যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তলন করে তাহলে তাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না,আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

লিজের তথ্যমতে হাতিমনগর মৌজার খতিয়ান নং ১ এর ২৭১২,৪৭৬৫ (নদী ৩) দাগ,বাঘা মৌজা ৬৪৯৯,৬৫৭২ (নদী ২.৭৫) স্বরসতি ১ (নদী ৩.৫০) ফুলবাড়ি ১,২৫০১ (নদী ১.৫০) হাজীপুর ১,২০০১ (নদী ৩১.৫০) এর মধ্যেই বালু উত্তলন করতে হবে,এর বাহিরে বালু উত্তলন করার কোন সুযোগ নেই।