Home রাজনীতি ‘অদৃশ্য কারণে’ আসছে না জাবি ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি!

‘অদৃশ্য কারণে’ আসছে না জাবি ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি!

16

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের পর ২০ দিন পার হলেও ‘অদৃশ্য কারণে’ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এমনকি আর্থিক লেনদেনের কারণে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা ও এনামুল হক তানান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক শিশির ও উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সাফরিন সুরাইয়া।

জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসেন তদন্ত কমিটির সহ-সভাপতি এনামুল হক তানান। তবে তার ক্যাম্পাসে আসার বিষয়ে জানতেন না তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা। তানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলেও জানান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, ‘তদন্ত কমিটির সদস্য তানান ক্যাম্পাসে আসলে তাকে লিটনের জমি দখলে ভিডিও দেখিয়েছি। তিনি তখন বলেন, এটা লিটনের ব্যক্তিগত বিষয়। সে (লিটন) তো ক্যাম্পাসে জমি দখল করেনি। পরে জানতে পারি, লিটনের সাথে তানানের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এ কারণে তাদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করতে এতো গড়িমসি।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের কাছ থেকে তানান ‘৫ লক্ষ টাকা নিয়ে গেছে’- এমন কথা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। এমন ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান প্রতি হতাশ হয়েছেন নেতাকর্মীরা।

তারা জানান, ‘সাদ্দাম ভাই ও ইনান ভাই আমাদের ভরসার কেন্দ্র ছিলো। আমরা ভেবেছিলাম তারা একটি সুষ্ঠু তদন্ত করবে। কিন্তু তারা যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তারা শুধু অবহেলাই করেনি ববং অভিযুক্তদের কাছে টাকা নিয়ে চুপ হয়ে গেছে। আশা করি, সাদ্দাম ও ইনান ভাই বিষটি বিবেচনায় নিবেন।’

এছাড়া তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথার একটি কল রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। যেখানে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার আগেই সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনকে নির্দোষ দাবি করেছেন তিনি। এমনকি বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘টাকার ভাগ নেওয়া’সহ বিভিন্ন দোষারোপ করতে থাকেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্ত কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক তানান বলেন, ‘অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেটা অনানুষ্ঠানিক একটা গমন ছিলো, যেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ও সম্পাদক লিটন কেউই জানেনা। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী ও অন্য নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলেছি। ফলে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করতে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন কমিটি গঠিত হওয়ার দশ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে জাহাঙ্গীরনগরে সাম্প্রতিক ধর্ষণকান্ডে উদ্ভূত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আমরা আনঅফিসিয়ালি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বর্ধিত করেছি। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে বসন্তবরণ, সাংগঠনিক সফর সহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নানা ব্যস্ততা ছিল। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলে আশা করছি।’

সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি অনানুষ্ঠানিকভাবে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আর তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখার জন্য প্রয়োজনে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করবো।’

এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে অন্য হলের নেতাকর্মীদের খোঁজ না রাখা, হল কমিটি না দেওয়া, জমি দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারই অনুসারী ছয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ২৭ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সরেজমিন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে হিসেবে ৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ের পর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও তদন্ত কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি।

এদিকে হাবিবুর রহমান লিটনকে অবাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধরা। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি রাতে সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় না করে হল কমিটি দেওয়ায় মিছিল বের করে লিটনের হলের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। এছাড়া লিটনের পদত্যাগের দাবিতে চলতি মাসের ২ তারিখে কালো পতাকা মিছিল ও ৩ তারিখে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেন তারা।