Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস ৭০ হাজার শূন্য পদ, তবু নিয়োগে গা-ছাড়া ভাব!

৭০ হাজার শূন্য পদ, তবু নিয়োগে গা-ছাড়া ভাব!

27

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে বেসরকারি স্কুল-কলেজে এখনো ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য। এই শিক্ষকসংকটে ক্লাস হচ্ছে না নিয়মিত। অথচ নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাছাড়া ভাব। ঢিমেতালে চলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন নিয়োগদানের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
গভর্নিং বডি-ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই এনটিআরসিএ প্রতি বার তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। ফলে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। এনটিআরসিএর ভুল সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে ভুক্তভোগী প্রার্থীরা আদালতের মাধ্যমেই সমাধান পাচ্ছেন।
প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক—এই তিন স্তরের পরীক্ষায় অংশ নিয়েও এখন চাতক পাখির মতো উত্তীর্ণ প্রার্থীরা তাকিয়ে আছেন এনটিআরসিএর দিকে। কারণ এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েও নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। এনটিআরসিএ নিয়োগের জন্য একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে। সেই আলোকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে। পদ শূন্য থাকলেই নিয়োগ পাবেন তারা। অথচ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ প্রার্থীদের।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারছে না এনটিআরসিএ—এমনটি জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান। তিনি বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। এ কারণে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। পাওয়া গেলেই জারি করা হবে।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ার শুরুর অংশ হিসেবে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আবেদন শুরু হয় ২৩ মে ২০১৯ তারিখে। এতে ১১ লাখ ৭৬ হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় একই বছরের ৩০ আগস্ট। আর ফল প্রকাশিত হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। এতে ২ লাখ ২৮ হাজার ৪৪২ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। পরে লিখিত পরীক্ষা হয় একই বছরের ১৫ ও ১৬ নভেম্বর। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সবকিছু আটকে যায়। আটকে যায় ফল প্রকাশ। লিখিত পরীক্ষার এক বছর পর ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হন ২২ হাজার ৩৯৮ জন প্রার্থী। যদিও এনটিআরসিএর নীতিমালায় দুই মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফল দেওয়ার কথা। এই নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর। এই পরীক্ষা শেষ করতে সাত মাস সময় লেগে যায়। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর, যেখানে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ করা হয় ১৮ হাজার ৫৫০ জন প্রার্থীকে।

চাকরিপ্রাথীরা বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও সচিবের সঙ্গে সাক্ষাত্ করলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। এপ্রিল মাসে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি না পাওয়ায় পরবর্তী মে মাসে ১৬তম নিবন্ধনধারীরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জুলাই মাসে পুনরায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে প্রার্থীরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

প্রার্থীরা জানিয়েছেন, আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ফলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করার পরেও ৩৫ পেরিয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই আবেদনের যোগ্যতা হারাচ্ছেন। আজিজুল নামে এক প্রার্থী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা ৫০ বারের বেশি স্মারকলিপি দিয়েছি এনটিআরসিএতে। বারবার এনটিআরসিএর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে প্রতিদিন নিবন্ধিত প্রার্থীদের ৩৫ বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। নিবন্ধনপ্রার্থী এনায়েতউল্লাহ তোহা বলেন, ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল প্রকাশিত হয়ে গেল, অথচ আমরা আজ প্রায় চার বছর ধরে বসে আছি।’
ইত্তেফাক