Home জাতীয় ৪০বছর পর বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে অবহেলিত চরসোনারামপুরবাসী

৪০বছর পর বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে অবহেলিত চরসোনারামপুরবাসী

54

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৪০বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জের চরসোনামারমপুরবাসী গ্রামের বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছে। মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা চরবাসীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
দেশের বৃহত্তর বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে চরসোনারামপুর গ্রামের অবস্থান। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২নংওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিদ্যুতের কাছে থেকেও বিদ্যুৎ না পাওয়ার আক্ষেপ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিদ্যুতের আশায় আর আশ্বাসে বছরের পর বছর কেটে গেছে তাদের। কিন্তু বিদ্যুতের আলোর দেখা পাননি চরবাসী। এর মাঝেই চরসোনারামপুরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে এবার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে চরসোনারামপুরবাসীর। মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর দুই প্রান্তে ১১ হাজার ভোল্টের প্রয়োজনীয় ওভারহেড লাইন নির্মাণ করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর বিওসি ঘাট থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে ১১ হাজার ভোল্ট সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল এইচডিডি পদ্ধতিতে স্থাপন করা হবে। এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যায় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।
জানা যায়, শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুক চিড়ে জেগে উঠা চরে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে মানুষ বসবাস করছেন। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত এ চরটির নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর নামে। বর্তমানে চরের এই গ্রামটিতে প্রায় ৬হাজার মানুষের বসবাস। মেঘনা নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন চরের বাসিন্দারা। তবে কালের আবর্তে এখন চরবাসীর কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১টি ইউনিট সচল রয়েছে। প্রতিদিন দেড় হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। আশুগঞ্জকে বলা হয় বিদ্যুতের শহর। কিন্তু দীর্ঘ ৪০ বছরেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি চরসোনারামপুরে। গত ২০২০সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
চরসোনারামপুর গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ থাকলে বিদ্যুতের জন্য ছিল হাহাকার। অবশ্য সরকারিভাবে বিদ্যুৎ না পেলেও চরের লোকজন নিজ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময় সৌরবিদ্যুৎ নিয়েও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো।
অবশেষে চরসোনারামপুরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর কাজ শুরু হচ্ছে। মেঘনার তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এজন্য ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করা শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যেই সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চরসোনারামপুর গ্রামের প্রকাশ লাল বাবু জানান, বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন যদি আমরা বিদ্যুৎ পাই তাহলে আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘চুক্তি মোতাবেক ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। মালামাল আসা শুরু হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করবে। কাজ শেষে চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।