Home রাজনীতি ২০২২ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জনসংহতি সমিতির প্রতিবেদন

২০২২ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর জনসংহতি সমিতির প্রতিবেদন

68

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০২২ সালের পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর গণমাধ্যমে পাঠানো জনসংহতি সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে জানান, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মতো ২০২২ সালে সামরিক উপায়ে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের কার্যক্রম জোরদার করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী এই সরকার একনাগাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ফলে ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যু প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক ২৩৫টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ১,৯৩৫ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়।

২৩৫টি ঘটনার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ১১০টি ঘটনার ৭৭৯ জন, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক ৮৫টি ঘটনার ৭০৮ জন, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যু কর্তৃক ৪০টি ঘটনার ৪৪৮ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ ও সেনাবাহিনীর হুমকি ও উৎপীড়নের ফলে রুমার বম জনগোষ্ঠীর অন্তত ২৯৪ জন মিজোরামে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে তারা মিজোরাম সীমান্তে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকন্তু রুমার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কুকি-চিন ট্রেনিং সেন্টার (কেটিসি) নামে কেএনএফের ক্যাম্পে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার জঙ্গীদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে কেএনএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্বের জন্য বিপদজনক তো বটেই, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও অধিকতর হুমকিমূলক।

অপরদিকে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে বাঘাইছড়িতে ১৮৮ পরিবারসহ তিন পার্বত্য জেলায় জুম্ম গ্রামবাসীদের অন্তত ৫০০ পরিবারের ঘরবাড়ি, বসতভিটা ও বাগান-বাগিচা ধ্বংস হয়েছে, এসব পরিবার চিরায়ত জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদের মুখে পড়েছে এবং অত্রাঞ্চলের জীব-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত ২ ডিসেম্বর ২০২২ পার্বত্য চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোটিয়র ফ্রান্সিসকো ক্যালি জাই-এর প্রদত্ত বিবৃতিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

গত ১২-১৭ নভেম্বর ২০২২ রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফরের সময় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত বর্ণবাদী ও বিতর্কিত ১০টি নির্দেশনার ফলে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কূটনীতিক প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়নি। ১০টি শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সভার উপর নজরদারি রাখার জন্য রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের বৈঠকে রাঙ্গামাটি আসনের ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও রাঙ্গামাটি জেলার ডিসি এবং চাকমা সার্কেল প্রধানের সাথে বৈঠকে রাঙ্গামাটি জেলার ডিসিকে উপস্থিত রাখার নির্দেশনা।