Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতিতে এসেছে মাত্র ৩২ হাজার টন

১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতিতে এসেছে মাত্র ৩২ হাজার টন

30

ডেস্ক রিপোর্ট: চালের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে মোটা চালের দাম আরো বেড়েছে। এ নিয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সব ধরনের চালের কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এভাবে লাগামহীনভাবে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প-আয়ের মানুষ। ওএমএসের চাল কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন ক্রমেই বড় হচ্ছে।

কিন্তু কেন বাড়ছে চালের দাম? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে চালের দামের ওপর। এছাড়া চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় মিলে চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। পাশাপাশি চাল মজুতের অভিযোগও পাওয়া গেছে মিলারদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীরা। তারা এখন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিনের বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সরকারের এ সংস্থাটিই জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, বর্তমানে বাজারে ৫৫ টাকা কেজির নিচে মোটা চাল নেই। যদিও বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। ৫৬/৫৭ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। দাম বেড়েছে মাঝারি মানের ও সরু চালের দামও। সবমিলিয়ে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সব ধরনের চালের কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর কাওরানবাজার ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের বাজার বেশ চড়া। মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫৭ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা আর সরু চাল মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৮ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে—মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শুধু মোটা চাল ইরি/স্বর্ণার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও সরু চাল মিনিকেট/নাজিরশাইলের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে গতকাল নতুন বাজারের খুচরা বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়েছে বলে তাদেরকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার দোকানের বেশির ভাগ ক্রেতা গার্মেন্টস শ্রমিক। আগে প্রতি মাসে তারা যে পরিমাণ চাল কিনতেন এখন তা কমে গেছে।

কাওরান বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন পাইকারী চাল ব্যবসায়ী বলেন, আগে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা তা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর হয়েছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। বাড়তি ভাড়ার এই টাকা চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাই চালের দাম বেড়ে গেছে।

দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, বাজারে ধানের দাম বেশি। এজন্য চালের দাম বেড়েছে। তবে ধান-চালের উৎপাদন নিয়ে কৃষি বিভাগের ভুল তথ্যের কারণেও চালের বাজার অস্থিতিশীল বলে মনে করেন নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ধান কম উৎপাদন হয়েছে। অথচ কৃষি বিভাগের কর্তারা বলছেন, মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্যঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বাড়ছে এটা একটা কারণ হলেও দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করছে। কারণ, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৩২ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে । এটকেই সুযোগ হিসেবে দেখছে কারসাজি চক্রটি। সূত্র জানিয়েছে, আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় চিন্তায় রয়েছে। সরকার এখন চাল আমদানি শুল্ক আরো কমানোর চিন্তা করছে। এজন্য গত ৭ আগস্ট চালের শুল্ককর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার একটি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। সূত্র বলেছে, যথেষ্ট পরিমাণে চাল আমদানি করা হলে বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে খাদমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হবে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া খোলাবাজারে (ওএমএস) বিক্রির জন্য চালের বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে ৪ থেকে ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে।

আটা, ময়দার দামও বেড়েছে

চালের পাশাপাশি আটা, ময়দার দামও বেড়েছে। শুধু তাই নয়, আটা, ময়দার দাম এখন মোটা চালের চেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটা, ময়দায় ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে খোলা সাদা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, লাল আটা ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, প্যাকেট আটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে চাহিদামতো গম আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচও অনেক বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচ। এসবের প্রভাবে দেশের বাজারে আটা, ময়দার দাম বেড়েছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটায় ২৮ দশমিক ০৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর ময়দার দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪১ থেকে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত।
ইত্তেফাক