Home ধর্ম হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব শ্যামাপূজা উদযাপিত

হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব শ্যামাপূজা উদযাপিত

53

ডেস্ক রিপোর্ট: হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা বৃহস্পতিবার উদযাপিত হয়েছে। তবে শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষাপটে কালীপূজা নামে পরিচিত এই উৎসবকে ঘিরে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচিরও আয়োজন ছিল। সিলেট ও বরিশালে কালীপূজার পাশাপাশি উদযাপিত হয়েছে দীপাবলি উৎসব।

শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠে বৃহস্পতিবার অনাড়ম্ভরভাবে উদযাপিত হয়েছে। পূজা শুরু হয় রাত সাড়ে ৯টায়। পূজা চলাকালীন শ্যামাসংগীত পরিবেশন করেন সাধু, ব্রহ্মচারী ও আগত অন্য শিল্পীরা। কোনো প্রকার বাজি-বারুদ, প্রদীপ প্রজ্বালন ইত্যাদির আয়োজন এ বছর আশ্রম থেকে করা হয়নি। ভক্তদের সমাগম ছিল প্রচুর। হোম শেষে পুষ্পাঞ্জলির মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হয় ভোররাতে। উপস্থিত ভক্ত সবাই পূজা শেষে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন।

এদিন রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে শ্যামা দেবীর পূজা আয়োজিত হয়। পাশাপাশি প্রসাদ বিতরণ ও আরতির আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নারকীয় তাণ্ডব ও বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বানে অনেক মন্দির-মণ্ডপে প্রতিমার বদলে ঘটে শ্যামাপূজা আয়োজন করা হয়। বেশিরভাগ মণ্ডপ ও মন্দিরে দীপাবলি উৎসবও বর্জন করা হয়। তবে দীপাবলি উদযাপনে সন্ধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকের ঘরে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। একাধিক দিনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পূজাকে ঘিরে আড়ম্বর পরিহার করা হয়। এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে নিরাপত্তামূলক আলোকবাতি ছাড়া আলোকসজ্জাও পরিহার করা হয়। প্রতিবাদী কর্মসূচির অংশ হিসাবে শ্যামাপূজার আগে মন্দির-মণ্ডপে এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দর্শনার্থী ও ভক্তরা নীরবতা পালন করেন। মন্দির/মণ্ডপের প্রবেশমুখে কালো কাপড়ে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক সহিংসতাবিরোধী স্লোগানসংবলিত ব্যানারও টানানো হয়।

রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শ্যামাপূজা উদযাপিত হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে রাতে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে দীপাবলি উৎসব বর্জন করার পাশাপাশি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সামনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে নীরবতা পালন করা হয়। পূজামণ্ডপের প্রবেশমুখে কালো কাপড়ে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক সহিংসতাবিরোধী স্লোগানসংবলিত ব্যানারও টানানো হয়।

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি তাপস পাল জানান, আমাদের ওপর যে হামলাগুলো হয়েছে সে কারণে প্রদীপ জ্বালিয়ে যে উৎসব করা হয় তা এবার আমরা বর্জন করেছি। সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাঁড়াও- এ স্লোগানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোয়া ৬টা পর্যন্ত মুখে কালো কাপর বেঁধে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নীরবতা পালন করা হয়। সারা দেশের জেলায় জেলায় প্রত্যেক পূজামণ্ডপে এ কর্মসূচি পালন হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, বনগ্রাম রোডের রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, জয়কালী মন্দির রোডের রামসীতা মন্দির, রায়েরবাজার শেরেবাংলা রোড কালী মন্দির, পোস্তাগোলা শ্মশান, লালবাগ শ্মশান, ঠাটারীবাজার, শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, ফরাশগঞ্জ, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, দয়াগঞ্জ, শ্যামবাজার, কোতোয়ালি, নারিন্দা, যুগীনগর, নবাবপুর, রাজারবাগ, বাড্ডা, মতিঝিল, রমনা, গুলশান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং শ্যামপুরসহ বিভিন্ন স্থানেও প্রতিবাদ কর্মসূচি রেখেই শ্যামাপূজা উদযাপিত হয়।

সিলেট : নানান আশঙ্কার মধ্যেও সিলেটে দীপাবলি ও শ্যামাপূজা পালিত হয়েছে। তবে শ্যামাপূজায় কালো কাপড় টানিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল মন্দিরে মন্দিরে। দীপাবলিতেও অতীতের মতো তেমন উচ্ছ্বাস ছিল না। নগরীর মীর্জাজাঙ্গাল, কাষ্টঘর এলাকায় কালীপূজার আয়োজন ছিল কয়েকটি মন্দিরে। পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা যুগান্তরকে বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার ঘটনার প্রভাব পড়ায় শ্যামাপূজা ও দীপাবলিতে আড়ম্বরতা কম ছিল।

বরিশাল : উৎসবের ঋতু হেমন্তের পরিবেশে দুইশ বছরের পুরোনো উপমহাদেশের বৃহৎ বরিশাল মহাশ্মশানে দীপাবলি উৎসব শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই উৎসবে রীতি অনুযায়ী স্বজনদের স্মরণের মাধ্যমে আত্মার শান্তি কামনায় সমাধিতে মোমবাতি, ধূপকাঠি ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। মোমবাতি ও প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো মহাশ্মশান এলাকা। সুষ্ঠুভাবে উৎসব শেষ করতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তা।-যুগান্তর