বিশেষ প্রতিনিধি, মিয়ানমার : বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল স্বাধীনতা ওজাতীয় দিবস উদ্যাপন করেছে। দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম অংশে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বাণী পাঠ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা পর্ব। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে ইয়াঙ্গুনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আয়োজন করা হয় যেখানে মিয়ানমারের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, Yangon Region Government-এর মুখ্যমন্ত্রী এবং ইয়াঙ্গুন সিটি-মেয়রসহ মিয়ানমার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
সন্ধ্যায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ইয়াঙ্গুনস্থ Lotte Hotel-এ একটি বর্ণাঢ্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় যেখানে প্রায় সকল রাষ্ট্রদূত/মিশন প্রধানসহ শতাধিক কূটনীতিক, জাতিসংঘের ১৫টির অধিক সংস্থার প্রধানগণ, মিয়ানমার সকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ, মিয়ানমারের ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ৩০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করাসহ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সাম্প্রতিক উন্নয়নকে উপজীব্য করে দূতাবাস কর্তৃক স্থানীয়ভাবে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের সচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে একটি কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত ও দূতাবাস পরিবারের শিল্পীরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঢোলের সাথে লোকসঙ্গীত সহকারে সমন্বিত নৃত্য পরিবেশন করে যা এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। সাংস্কৃতিক উপস্থাপনাটি দর্শকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজনে ভিন্নধর্মী মঞ্চসজ্জা এবং সৃষ্টিশীল আলংকারিক আয়োজন অতিথিদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাংলাদেশি ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিক বাংলাদেশের উপস্থাপনা উপস্থিত সকলের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াঙ্গুনে আয়োজিত বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের মাঝে বাংলাদেশের এই আয়োজন এক নতুন মাত্রা সংযোজন করে।
অতিথিদের বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ বিভিন্ন রকমের আয়োজনে ইফতার এবং নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের বাংলাদেশি পাটের তৈরী জুয়েলারি ব্যাগ, দেশে উৎপাদিত চা এবং ঐতিহ্যবাহী শুকনা মিষ্টান্নসহ একটি সুদৃশ্য স্মারক ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সকালে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায়মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোঃ মনোয়ার হোসেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি শ্রদ্ধাভরে মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সম্ভ্রম হারানো দুই লাখের বেশি নারীর আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে ‘মুজিবনগর সরকার’, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, প্রবাসী নাগরিকদের ভূমিকা এবং বিদেশি বন্ধুদের অবদান তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ-‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সকলকে ভূমিকা রাখতে আহবান জানান। এর আগে ২৫ মার্চ ২০২৪ দূতালয়ে আলোচনা সভার মাধ্যমে যথাযথ মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালন করা হয়।