স্টাফ রিপোটার: জাতীয় সংসদে দলীয় সদস্যদের চাইতে স্বতন্ত্ররা বেশি আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ পাবেন বলে বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তাদের সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার নির্দেশনা দেন। তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বতন্ত্র হিসেবেই তোমরা কাজ কর। এখানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা আমার ডান হাত, ওটা আমার বাম হাত। যারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি, তারা সংসদে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার সুযোগ পাবে।”
রোববার (২৮ জানুয়ারি) গণভবনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে উপস্থিত ফরিদপুর-৩ থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ নিশ্চিত করেছেন।
সাড়ে ছয়টার পরে শুরু হওয়া বৈঠকের শুরুতে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বক্তব্য দেন। পরে স্বতন্ত্র এমপিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। একই সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬২টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সংসদের বিধিবিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০ জনকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। তবে নিজেরা মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে এসব আসনের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে অর্পণ করেছেন তারা।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, “আমরা নৌকা পাইনি। কিন্তু আমরা দলের বিভিন্ন পদে আছি, দায়িত্বে আছি। আবার আমরা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। আমরা বলেছি, এলাকায় কাজ করতে নানা অসুবিধা হচ্ছে। সুতরাং দলের মধ্যে যেহেতু আছি সেহেতু আমাদের একত্রিত করা হোক।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবেই তোমরা কাজ কর। এখানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা আমার ডান হাত, ওটা আমার বাম হাত। যারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি, তারা সংসদে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার সুযোগ পাবে।”
সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে স্বতন্ত্রদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে এ কে আজাদ বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি, যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন। যারা সংসদে জনগণের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন কাউকে আপনি মনোনয়ন দেবেন। এটা আমরা নিজে থেকে বলে এসেছি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আওয়ামী লীগ এখানে এসেছে, সেসব পরিবারকে স্বীকৃতিস্বরূপ সংরক্ষিত নারী আসন দিতে আমরা অনুরোধ করেছি।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দলের সাংগঠনিক কাজে জড়িত থাকতে পারবে কি না– জবাবে এই সংসদ সদস্য বলেন, অবশ্যই তারা জড়িত থাকতে পারবেন। কারণ তারা সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করছেন। সুতরাং এটাতে কোনো বাধা নেই।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি -পাকুন্দিয়া) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন বলেন, “আমরা সবাই সংরক্ষিত নারী এমপির দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি যা ভালো মনে করবেন, আমরা চোখবুঝে স্বাক্ষর করব।”
ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী বলেন,“ এখানে যারা উপস্থিত ছিলেন প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আমাদের গায়ে যদি এখনো স্বতন্ত্রের সিল লেগে থাকে, তাহলে দলের পদে থেকে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা হবে এবং এখনো হচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন কথা বলছে। সেক্ষেত্রে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মতামত কী হবে? জবাবে তিনি বলেছেন, দলীয় সংসদ সদস্যরা যতটুকু কথা বলতে পারবেন, তার চেয়ে আমরা বেশি কথা বলার সুযোগ পাব।”
সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, “স্বতন্ত্ররা সবাই উপস্থিত হয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী সবার পরিচয় নিয়েছেন, সবার কথা শুনেছেন। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সবাই মিলে আমরা দাবি করেছি, আমরা আওয়ামী লীগের লোক। আওয়ামী লীগেই থাকতে চাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তোমরা আওয়ামী লীগের লোক, আওয়ামী লীগেই আছ। সুতরাং আমরা মনে করি, আমরা আওয়ামী লীগে যাচ্ছি এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সংসদে ভূমিকা পালন করব।”
ঢাকা-৫ আসনের স্বতন্ত্র এমপি আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, “আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, তিনি যা ভালো মনে করবেন,তাই আমরা মাথা পেতে নেব।”
একই সুরে কথা বলেন ঢাকা -৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি ড. আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, “সোমবার সকাল ১০টায় আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করবেন,আমরা সেটা মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করবে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ৭ জানুয়ারি। দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়ী হন। বিজয়ী ৬২ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত, কেউ কেউ পদধারী নেতা।
আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকবে জাতীয় পার্টি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।