Home জাতীয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে ডিজিটাল আইনকে ব্যবহার করছে সরকার

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে ডিজিটাল আইনকে ব্যবহার করছে সরকার

29

৪৯ জন নাগরিকের বিবৃতি

ডেস্ক রিপোর্ট: গত ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ কর্মীর ‘রাষ্ট্র ও ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা প্রীতম দাশকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ২৭ আগস্ট ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করলে সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগের একাংশ হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ হামলাকারীদের বিচার দাবি করে। প্রীতম দাশ সে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েছিলেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনের পরপর স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রীতম দাশের পুরনো ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনে। প্রীতম দাশের ফেসবুকে শেয়ারকৃত বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক সাদাত হোসেন মান্টোর একটি উদ্ধৃতিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। উল্লেখ্য, প্রীতমের আগে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ অনেকেই এই উদ্ধৃতিটি প্রচার করেছেন।

আজ ৪৯ জন নাগরিকের পক্ষে মারজিয়া প্রভা গণমাধ্যমকে পাঠানো বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে আরও বলেন, পরবর্তীতে স্থানীয় মসজিদসমূহের ইমাম এবং স্থানীয় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রতিরোধ করা গেলেও প্রীতম দাশকে নিরাপত্তা দেয়ার বদলে উল্টো তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিন্নমত ও আন্দোলন দমানোর জন্য সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেটা ভণ্ডুল হয়ে গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের মতো নিপীড়নমূলক আইনের মাধ্যমে হয়রানি করার এমন নগ্ন নজিরে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রকাশ্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে গ্রেফতারকৃত প্রীতম দাশকে রিমাণ্ডে নেয়ার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে।

নাগরিকবৃন্দ উদ্বেগের সাথে বলেছেন, একদিকে রাষ্ট্র ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো চরম সমালোচিত এবং কুখ্যাত আইনকে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সমাজের ভেতর সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরিতে ক্ষমতাসীনরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ক্ষমতাসীনদের এমনতর কর্মকাণ্ড সমাজের ভেতর এক ভয়াবহ ফাটল ও অস্থিরতা তৈরি করছে বলে আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে, অবিলম্বে প্রীতম দাশসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। প্রীতম দাশকে রিমান্ডের মাধ্যমে অযথা হয়রানি ও নির্যাতন করা যাবে না।অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি তুলেন।

বিবৃতিকারীরা হলেনঃ

আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জোবাইদা নাসরিন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক আইনুন নাহার, মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, মাহা মির্জা, সাইদিয়া গুলরুখ, ফরিদা আখতার, শিরিন হক, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান,সুব্রত চৌধুরী, মোঃ নুর খান লিটন, মানস চৌধুরী, অধ্যাপক, বাকি বিল্লাহ, রাশেদ শাহরিয়ার, দিলীপ রায়, নজির আমিন জয়, অনিক রায়, আরিফ মাইনুদ্দিন, তাওফিকা প্রিয়া, সৈকত আরিফ, সুনয়ন চাকমা, অভিনু কিবরিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক, বীথি ঘোষ,ফয়জুল হাকিম, শহিদুল ইসলাম সবুজ, অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, ফাহমিদুল হক, হানা শামস আহমেদ, গবেষক প্রফেসর ডঃ হারুণ অর রশিদ, আসিফ নজরুল, বীণা ডি কস্তা, রোবায়েত ফেরদৌস, রোজিনা বেগম, জান্নাতুল মাওয়া, সীমা দত্ত, আবদুল্লাহ আল নোমান, আরিফুজ্জামান তুহিন, রহমান মুফিজ, ফারুক ওয়াসিফ, কবি ও সাংবাদিক সৈকত আমিন, মনিরা শরমিন, তাসাফি হোসেন, ফেরদৌস আরা রুমী, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী ও আলমগীর কবির।