Home রাজনীতি সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে: মেনন

সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে: মেনন

25

স্টাফ রিপোটার: ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধকরার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন সেই জামাতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, জামাতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। এটা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন জামাত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নাই। জামাত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে নাই। ঐ সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা জাক করে বলেছিলেন বিএনপি-জামাত একই বৃন্তের দু’টি ফুল। যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনও বলছি সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামাত-হেফাজতের সাথে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতাকালে আজ একথা বলেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন এর বাজেটের ওপর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য তুলে ধরা হলো:

মাননীয় স্পীকার,
আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে। তিনি অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে এবারের বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটা সম্ভবত ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের ইঙ্গিতবাহী। তবে এই বাজেটে বাংলাদেশের বর্তমান কার্যতঃ অনুপস্থিত। বাজেটের ধারা বর্ণনায় অর্থমন্ত্রীর প্রধান বিষয় ছিল গত দেড় দশকের অতীতের অর্জন। আর ভবিষ্যত দশকের সুখ স্বপ্নের কথা। বাজেট শুনে দেখে মনে হয় নাই এটা সংকটকালের বাজেট। মাননীয় স্পীকার সংকট এখন সর্বব্যাপী। মূল্যস্ফিতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, জ¦ালানি সংকট, ডলার সংকট, নদীর পানির সংকট, সংকট কোথায় নাই। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে দাঁড়িয়ে যখন বলছেন যে মূল্যস্ফিতি ও লোডশেডিংয়ে জনগণের জীবন কষ্ট নেমে এসেছে, সেখানে অর্থমন্ত্রী ঐ মূল্যস্ফিতি ৬ শতকে ধরে রাখার আশাবাদ শোনালেও কিভাবে সেখানে নামিয়ে আনবেন তার কোন কৌশল বা নির্দেশনা বাজেটে দেননি। তিনি কেবল আশা প্রকাশ করেছেন বিশ^ব্যাপী পণ্যমূল্য নি¤œগামী। বিশ^বাজারে জ¦ালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ¦ালানি মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের কারণে মূল্যস্ফিতি কমে আসবে।

মাননীয় স্পীকার,
বিশ^ পণ্যমূল্যের উর্ধগতি দেশের বাজারে প্রভাব ফেললেও নি¤œগতি বাজারে প্রতিফলিত হয় না। এই সময়কালের অভিজ্ঞতা তা একেবারেই বলে না। বরং মূল্যস্ফিতি আরও বেড়ে ইতিমধ্যেই গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৯৪-এ পৌঁছে গেছে। বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতিতেও ভারত-নেপাল যেখানে মূল্যস্ফিতি নামিয়ে আনতে পেরেছে সেখানে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। বড় বড় অর্থনীতিগুলো যখন মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে, অর্থমন্ত্রী সেখানে সেটা ধরে রেখেছেন। ডলার সংকট নিরসনে ডলারকে বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়েছে। যেখানে সংকোচন করা হয়েছে তা নিতান্তই প্রান্তিক।

মাননীয় স্পীকার,
বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতার কারণে জিনিসপত্রের মূল্য একেবারেই লাগাম ছাড়া। পেয়াজের মূল্যের উর্ধগতি রোধের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপেই বোঝা যায় যে বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা আগ্রহী নন। অথবা কাউকে সুবিধা দিতে চান। দশদিন ধরে পেয়াজের মূল্য বাড়তে দিয়ে সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ছেড়ে রেখে যখন পেয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত হল ততদিনে ভোক্তা সাধারণ মানুষ কেবল নয়, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাননীয় স্পীকার,
আমি দেশে বিদ্যুতের অগ্রগতি সম্পর্কে মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে গৌরব অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিককালেই কেবল নয়, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের অধিকাংশ স্থানকে অধিকাংশ সময় অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে তাতে কালিমা লোপন করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে, এটাই বাস্তবতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিককালের বক্তৃতায় এই সত্যকে স্বীকার করেছেন, তার জন্য দুঃখও প্রকাশ করেছেন। আমরা জানি যে জ¦ালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। এটা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। স্পট মার্কেটে এলএনজি’র মূল্য বেড়ে যাওয়া, আমদানিকৃত কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে না পারার কারণে যথাসময়ে জ¦ালানি আনা সম্ভব হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে এর মূলে রয়েছে ভ্রান্ত জ¦ালানি আমদানি নীতি। এলএনজি লবির মুনাফার স্বার্থ দেখতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগ না করা। বাপেক্সকে অকার্যকর রাখা। অথচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গ্যাসকূপ খুড়লেই গ্যাস পাওয়া যায়। ভোলায় দুইটি কূপের বিপুল পরিমাণে গ্যাস প্রাপ্তি এর প্রমাণ। কিন্তু ঐ গ্যাস জাতীয় গ্রীডে নিয়ে আসা এখনও সম্ভব হয়নি। সমুদ্র থেকে গ্যাস আহরণে আমরা কেবল অযথা সময় ক্ষেপন করিনি, এই গ্যাস ব্লকগুলো বিদেশী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তুলে দেয়ার জন্য অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সমুদ্রের গ্যাসও আমাদের অধরা রয়ে গেছে। ভারত-মায়ানমার সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করলেও আমাদের আগ্রহ বা সিদ্ধান্তের অভাবে এই গ্যাস আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

মাননীয় স্পীকার,
বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ না উৎপাদন করে খাম্বা বসানো হয়েছিল, আর এখন, বিদ্যুতের সক্ষমতা আছে জ¦ালানি নাই। এ যেন তেল ছাড়া পিদিম জ¦ালানোর ব্যবস্থা। আমি আবার বলছি জ¦ালানি নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎমন্ত্রী আর প্রধান আমলারা এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের তিরস্কার না করে বরং বড় বড় পদে পাঠিয়ে দিয়ে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা যখন বলেন জনগণ চাইলে দিনের ভাগে লোডশেডিং করে রাতে বিদ্যুৎ দেয়া যেতে পারেÑ সেটা জনগণকে উপহাস করা ছাড়া কিছু নয়।

মাননীয় স্পীকার,
অবাস্তবতা রয়েছে কর আহরণের ক্ষেত্রেও। বর্তমান বাজেটে যেখানে সর্বোচ্চ দিয়েও কর আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি, আগামী অর্থ বছরে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বহুল্যাংশে বাড়ান হয়েছে। আর এর দায় রাখা হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। কিন্তু কিভাবে। তার একটা উদাহরণ পাই তার নতুন প্রস্তাবনায়। তিনি প্রস্তাব করেছেন করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন টিনধারীদের সেবা পেতে হলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এটা নাকি তাদের জন্য গর্বের হবে। আর বড়লোকদের গর্ব খর্ব করার জন্য সম্পদ করের সীমা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটিতে বাড়ানো হয়েছে।

মাননীয় স্পীকার,
সবদিক দিয়ে এটা অনৈতিক, অন্যায্য আর এতে বৈষম্য আরও বাড়বে। এ দু’টোই প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে কর আদায়ের জন্য যে আউটসোর্সিংয়ের কথা বলা হয়েছে তা এক্ষেত্রেও মধ্যস্বত্বভোগী সৃষ্টি করবে। জনগণের হয়রানী হবে।

মাননীয় স্পীকার,
বাজেটে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে বরাদ্দ টাকার অংকে বেড়েছে, কিন্তু মূল্যস্ফিতি হিসেবে ধরলে কমেছে। আর সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দের ৩০% ভাগ প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তা। এই বরাদ্দে সরকারি কর্মচারিদের পেনশন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রভৃতিও অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন ভাতার হার যেটুকু বেড়েছে তাও খুবই নগন্য বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা শতকরা হারে কমেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। কিন্তু সংখ্যা হিসেবে এখনও তিন কোটির উপর মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচেই বাস করছে। খাদ্যমূল্যসহ মূল্যস্ফিতির কারণে মধ্যবিত্তরা নতুন দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে প্রকৃতভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে সার্বজনীন পেনশন স্কীমের কথা বলা প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন আগামী অর্থবছরে এটা চালু হবে। কিন্তু পেনশন স্কীমে যে চাঁদা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে তাতে খেতমজুর-গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের কাছে এ সুবিধা পৌঁছুবে না। তাদের জন্য চাঁদার বিধান বাদ দিয়ে সেখানে নন-কন্ট্রিবিউটরি করলে পরে সেটা সত্যিকার অর্থে সার্বজনিন পেনশন হবে।

মাননীয় স্পীকার,
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীর উপর কেবল কৃষি নয়, পরিবেশও নির্ভর করে। কিন্তু গত ৫০ বছরে আমরা গঙ্গাসহ দু’একটি নদী ছাড়া ভারত থেকে আসা নদীগুলোর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে পারি নাই। গঙ্গা চুক্তির সময় শেষ প্রায়। সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার কাজটি গত ৩০ বছরে হয় নাই। তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে। পশ্চিম বাংলা সরকারের তিস্তায় দু’টি খাল খনন করার জন্য যে উদ্যোগের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তাতে তিস্তা, ধরলাসহ ১৮টি নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি থাকবে না। শুকনো মৌসুমে পানি না পাওয়া, আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর ভাঙ্গণ উত্তরবাংলার নদীগুলোর অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে বর্তমান সরকারই চীনের কারিগরি সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। কিন্তু কোন ভূ-রাজনৈতিক কারণে সেটা আলো বা বাস্তবতার মুখ দেখে নাই তা জানা নাই। তিস্তা পাড়ের মানুষ গত কয়েক বছর ধরে ঐ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করে আসছে। ৬ দফা দাবি নামা প্রণয়ন করেছে। ঐ অঞ্চলের মানুষের দাবি পদ্মা সেতুর মত নিজ অর্থায়নে ঐ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এই বাজেটেই তার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা। তিস্তা কর্তৃপক্ষ গঠন করা।

মাননীয় স্পীকার,
সরকার প্রতি জেলায় একটা করে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে এর জন্য অভিনন্দন। সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। সেখানকার ছাত্র ও অভিভাবক মহলের দাবি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা করা দরকার।

মাননীয় স্পীকার,
দেশে ডিজিটাল আইন নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। বিদেশীরাও এ নিয়ে কথা বলে। আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এই আইনের অপপ্রয়োগ বা এবিউজ হচ্ছে। বিদেশীদের কথায় নয়, নিজদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রশ্নে এই আইন হয় পরিপূর্ণ বাতিল বা নির্দেষ্ট গণবিরোধী ধারাগুলো সংশোধন প্রয়োজন। দেশের শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রেও বিদেশীরা কথা বলেন এবং মন্ত্রীরা তার জবাব দেন। কিন্তু যে শ্রমিকের জন্য আইন তাদের সাথে কথা বলেন না। আর বললেও যা তারা করছেন তাই মেনে নিতে বলেন। এখন শ্রমিক অধিকার খর্ব করার ক্ষেত্রে গোদের উপর বিষফোড়া হিসেবে অত্যাবশকীয় পরিষেবা সংক্রান্ত আইনের বাংলা করার নামে শ্রমিকের কার্যতঃ সকল ক্ষেত্রে ধর্মঘটের অধিকার নিষিদ্ধ করে বিধান সংযোজন করা হয়েছে। এই বিধান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তা’ছাড়া শ্রম আইনেই ধর্মঘট করার অধিকার স্বীকৃত। আবার বেআইনী ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও আছে।

মাননীয় স্পীকার,
তিন বছর আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে নিন্মতম মজুরি নির্ধারিত হয়েছিল তাতে দু’জনে কাজ করেও ঋণ করতে হয় এবং তারা ঋণ চক্রে জড়িয়ে পরছে। এবার তাদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। তাদের দাবি ২৩,০০০ টাকা। একই সঙ্গে মাননীয় স্পীকার জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০,০০০ টাকা নির্ধারণে দাবি করছি। গৃহকর্মীদের জন্য প্রতিশ্রুত আইনও ঝুলে আছে। নির্বাচনের আগে সেটাও করা প্রয়োজন।

মাননীয় স্পীকার,
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন নাই। পাহাড়ে আবার অশান্তি। পাহাড়ের এই অশান্তি সমতলেও বিস্তৃত হয়েছে। কুকিচিন ফ্রন্ট জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি করতে চায়। এটা ঠিক যে সেনাবাহিনী ঐ কুকিচিন ফ্রন্টের ক্যাম্প গুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর ¯্রষ্টা কে, কাদের পৃষ্টপোষকতায় এই ফ্রন্টের তৈরি তা দেশবাসী জানতে চায়। আমি এ ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য দাবি করছি। মাননীয় স্পীকার সমতলের আদিবাসীদের ভূমি কমিশনের দাবি উপেক্ষিত। তাদের মূল ধারায় আনতে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

মাননীয় স্পীকার,
বাংলাদেশ রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে থাকলেও বাংলাদেশের সমাজ দ্রুতই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদের পৃষ্টপোষকতায় ওহাবীবাদী-মওদুদীবাদী প্রচারণা বাংলাদেশ উদারনৈতিক ইসলামের ঐতিহ্য বিপন্ন। জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ। ধর্মীয় অসহিংষুতা এদেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সোশাল মিডিয়ায় এই উগ্রবাদী অসহিষ্ণুতা প্রচার লাগাম টানার কোন ব্যবস্থা নাই। আমি এই সংসদে আপনার কাছে সে সব বক্তব্যের পেনড্রাইভ দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন ব্যবস্থা দেখিনি। লোকায়ত সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আউল-বাউল যাত্রাগান-গাজীর গান এই সব উগ্রবাদীদের আক্রমণের সম্মুখিন।

মাননীয় স্পীকার,
সম্প্রতি সময়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের আর নিরাপদ বোধ করেন না। তাদের মধ্যে মানসিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এই আওয়ামী লীগই তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও মাইনরিটি কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। গত দেড় দশকে তার কোন বাস্তবায়ন নাই। নির্বাচনের আগেই এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অর্পিত সম্পতি সম্পর্কে যে আইন করা গেছে তার বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, মানসিক প্রশান্তি ও এদেশে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি।

মাননীয় স্পীকার,
পরিশেষে আমি দেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম যে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধকরার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন সেই জামাতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, জামাতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। এটা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন জামাত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নাই। জামাত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরে নাই। ঐ সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা জাক করে বলেছিলেন বিএনপি-জামাত একই বৃন্তের দু’টি ফুল। যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনও বলছি সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জামাত-হেফাজতের সাথে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে।

মাননীয় স্পীকার,
ঐ একই কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নাই। বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল, দূরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জে’র কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। আর তার জন্য শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়া প্রয়োজন। এটা তাদের পুরান নীতির ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পিছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন করে আমি বলতে চাই বাইডেন সাহেব ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাবো। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯-এর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পরবে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পৃথিবীতে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকবে। ধন্যবাদ মাননীয় স্পীকার। জয় বাংলা।