Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মানববন্ধন

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মানববন্ধন

67

জাবি প্রতিনিধি: প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে গভীর রাতে তার বাসা থেকে তুলে নেওয়া ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার প্রতিবাদ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
মানববন্ধনে তিনটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলোÑ শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
মানববন্ধন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা নয়, তাদের দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সরকার আজ রাষ্ট্রকেই অস্বীকার করছে।’
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আল সেলিম বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলো অন্যের মতামতে শ্রদ্ধা করা। কিন্তু আমরা দেখছি দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি অথচ, তা বলার অধিকার নেই। শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে মূলত অন্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে রুখে দিতে হবে।’
গভীর রাতে বিনা ওয়ারেন্টে শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়ার এই ঘটনা সাংবাদিক ও দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘শহরের চাকচিক্য ছেড়ে সাংবাদিকতা করার জন্য, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শামস গ্রামীণ পরিবেশে থেকেছে। স্বাধীন দেশে একজন মা প্রথম সন্তানকে হারিয়েছেন, আরেকজন সন্তানকে রাতের আঁধারে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। শামস জনগণের কথাকে তুলে ধরেছে। আপনারা কিসের ভিত্তিতে শামসকে গ্রেপ্তার করেছেন? বাংলাদেশে এক শ্রেণির সাংবাদিক তৈরি হয়েছে যারা ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে আরও বাড়ানোর কাজ করে।’
জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি রাকিব আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকেরা যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। শামসুজ্জামানের অপরাধ কি? তাকে আটকের প্রক্রিয়াটা খুবই ন্যক্কারজনক। স্বাধীনভাবে কথা না বলতে পারলে গণতন্ত্র থাকে না। দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নীতিবিরোধী ব্যবহার হচ্ছে।’
সমাপনী বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ফ্যাসিবাদী মানসিকতার তামাশা লক্ষ্য করলাম। এই মানসিকতা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে ক্ষমতা কাঠামোকে উৎসাহিত করেছে। যেটি এখন সাংবাদিকতার যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতেই আজ শামস ভাই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।’
জাবিসাসের সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী দে, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি জহির ফয়সাল, বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী মামুন এবং মানবকণ্ঠের নাছির উদ্দিন শিকদার।