Home জাতীয় সাংবাদিক নাদিম হত্যার বিচার দাবিতে ডিইউজে ও বিএফইউজের বিক্ষোভ সমাবেশ

সাংবাদিক নাদিম হত্যার বিচার দাবিতে ডিইউজে ও বিএফইউজের বিক্ষোভ সমাবেশ

23

জাকির হোসেন আজাদী: বাংলানিউজ ও ৭১ টেলিভিশনের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার বিচার দাবিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বিক্ষোভ সমাবেশ করে এই হত‍্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও দ্রুত বিচার দাবী করেছে।

আজ শনিবার (১৭ জুন ২০২) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

বিএফইউজে (একাংশ) সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, নাদিম হত্যা একটি পরিকল্পিত বিষয়। শুধু যে চেয়ারম্যান জড়িত, এটি আমি বিশ্বাস করি না। পুলিশ আন্তরিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত জড়িতদের বের হয়ে আসবে। কেন এই হত্যাকাণ্ড তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, বালু, মানিক সাহা, সাগর-রুনিসহ কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। উলটো যারা নির্যাতন করেছেন, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। আমি ঘৃণা জানাই। সাংবাদিকরা ঘরে-বাইরে নানা নির্যাতনের শিকার। আজকে যে নাদিম হত্যা হল, তার পরিবার খুবই অসহায়। দুই বেলা খেতে পারছে না। আর যদি কোনো সাংবাদিক হত্যার শিকার হন, আমরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাব এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচি দেব।

বিএফইউজে (একাংশ) মহাসচিব দ্বীপ আজাদ বলেন, সারা বাংলাদেশে যেখানে পেশাদার সাংবাদিকরা কাজ করছেন। আমরা এ বছর সাংবাদিকদের জন্য হুমকি যেসব লোক আছেন, তার একটি তালিকা করতে চাই। আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি। ৭ বছরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ জনকে হারিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমরা দুইবার বলেছি, আপনি দ্রুত বিচার করেন। তিনি একটি ফোন কল দিয়েও খোঁজ নেন না। আমরা চাই না, যে তালিকা করা হবে সেখানে আপনার নাম থাকুক। গোলাম রাব্বানী নাদিম সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। জামালপুরের পুলিশ সুপার একদিন পর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। এই এসপির বিরুদ্ধেও প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। না নিলে তাকেও তালিকাভুক্ত করা হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি জামালপুরে গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার পরিবারের খুবই অসহায় অবস্থা। জানাজা দেওয়ার টাকাটাও নেই তার পরিবারের। আপনারা যদি খবর নেন, দেখবেন যিনি এই হত্যার জন্য দায়ী, ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্যান্যরা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় এসেছে। কিন্তু, তারা অনুপ্রবেশকারী। যারা আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছে, এদের খুঁজে বের করার এখনই সময়। তথ্যমন্ত্রী, আপনি তো সাংবাদিকদের অভিভাবক, আপনি কি এ ঘটনায় গিয়েছিলেন? দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন? আমি জানি না। কিন্তু, আপনার এটি করা উচিত। আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই সাংবাদিকদের কাজ করতে দেন। সাংবাদিকরা যদি কাজ না করতে পারেন, তাহলে যতই গণতন্ত্রের কথা বলেন, লাভ নেই। বহির্বিশ্বে নেতিবাচক মেসেজ যাবে। আপনারা সাবধান হোন, সাংবাদিকদের কাজ করতে দেন।

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, আমরা আজ শোকাহত, রক্তাক্ত। কেন রক্তাক্ত, কারণ নাদিম একজন পেশাদার সাংবাদিক। তিনি বলেছিলেন, কোনো হুমকি আমাকে থামাতে পারবে না। তিনি স্থানীয় মাসলম্যানের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন, এজন্য তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু হয় না পৃথিবীতে। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর না দিলে সারা বাংলাদেশে আগামী দিনে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

নেতারা বলেন, সে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় ঢাকায় কাজের লোক বানিয়ে নারীদের কাজের জন্য পাঠিয়ে সব কিছু লুটে নিতো। নাদিম সত্য সংবাদই প্রকাশ করেছেন। আমরা সাংবাদিকরা আজ বিভিন্নভাবে বঞ্চিত। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হোক। সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিকদের হত্যার বিচার করতে হবে।

বিএফইউজের নেতারা বলেন, নাদিমের দোষ কী? তিনি একজন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিউজ করেছিলেন। এর জন্য নির্মম হত্যা! তার পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? নাদিম তো হত্যার শিকার হয়েছেন। তথ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। অতীতে আমরা দেখেছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে। নাদিমের খুন আমাদের আরও বেগবান করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত হত্যার বিচার হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।

বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, কুদ্দুস আফ্রাদ, ডিউজের যুগ্ম সম্পাদক আলম খায়রুল, কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য দুলাল খান, সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব ও ডিইউজের আইন সম্পাদক শাহীন আলী প্রমুখ।