Home রাজনীতি সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে এই দানবীয় সরকারের বিরুদ্ধে: ফখরুল

সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে এই দানবীয় সরকারের বিরুদ্ধে: ফখরুল

29

স্টাফ রিপোটার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর কাল বিলম্ব নয় এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে এই দানবীয় সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে।

“আমি ভালো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করি এটি বিদেশিরা বলে না” প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার এ বক্তব্য এ বছরের সেরা জোক (কৌতুক)। উনার এ কথা শুনে ঘোড়াও হাসে।

শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম। সমাবেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছর এ ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা রাষ্ট্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ডিসি এসপিদের নিজেদের মত সাজিয়েছে, নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যত পারো মামলা দাও। আজকে মামলাকে উপেক্ষা করে মানুষ রাজপথে নেমেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি নামে আইন করে দেশের গণমাধ্যমের মুখ স্তব্ধ করতে পারলেও বিদেশি গণমাধ্যমের মুখ কীভাবে বন্ধ করবেন। গতকাল নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিলীনের পথে। লণ্ডনের একটি গণমাধ্যমে বলেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন তলানীতে ঠেকেছে। দেশের গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরলেও সাংবাদিকরাও গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে লেখার চেষ্টা করছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার জনগণকে বোকা বানাতে চায়। আজকে দ্রব্যমূল্যের এত ঊর্ধ্বগতি মানুষের ঘরের চাল নাই ডাল নাই তেল নাই। এই দিকে সরকারের কোন খেয়াল নাই। সরকারের খেয়াল একটাই কিভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে, কিভাবে দেশকে শোষণ করা যায়।

তিনি বলেন, অবিলম্বে এই সরকারকে বলবো সংসদকে বিলুপ্ত করে দিন। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। কিন্তু তারা জানেন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারা দশটি আসন ও পাবেন না। এ কারণে তারা দলীয় সরকারের অধীনে অবৈধভাবে আবারও নির্বাচন করতে চায়।

ফখরুল বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল স্তম্ভ ফ্যাসিস্ট সরকার ধ্বংস করেছে। এটাই পরিষ্কার সরকার রাষ্ট্র চালাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।

তিনি বলেন, আজকে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো তখন কোনো ভয় না যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো তরুণরা। আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়ার। এখনই সময়, ভয়াবহ সরকার সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে এই গণতন্ত্র দিবসে বলতে চাই এ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না।

বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে আদিলুর রহমানকে সাজা দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল মিল্টন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, বর্তমান সরকার, সরকার নয়, এরা কর্তৃত্ববাদী। এরা গুম খুন সাজা দিয়ে দেশকে অস্থির রেখে লুটপাট করছে। জনগণকে কোনো তোয়াক্কা করে না, এদের ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র অস্ত্র পুলিশ আর কোর্ট। এরা যেকোন ভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চায়। এদের কোনো লজ্জা সরম নেই। তারা বলে নির্বাচিত সরকার। পুলিশ আমলা ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিকরাও ১৫ বছর ভোট দিতে পারে নাই। ভোট না দিয়ে যদি ক্ষমতায় থাকা যায়, তাহলে ভোটের দরকার কি?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি নির্বাচনে শত কোটি টাকার গরু ছাগল বিতরণ করবে। জুতা মেরে গরু দান। এদেশের মানুষ গরু ছাগল চায় না, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা চায়, খেয়ে বেচে থাকতে চায়। সরকারের ডিসি (ব্যাচ ২৭) যদি থাকে তাহলে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা সমবেত হয়েছি, কারণ, এ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিলো গণতন্ত্রের জন্য। যে দেশের জন্য শহীদ জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, লাখ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছে। এ গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ সরকার হত্যা করেছে। এ সরকার গনতন্ত্র হরণ করে বাকশালি শাসন কায়েম করেছে। এরা শুধু গণতন্ত্র হত্যাই করেনি, মানুষের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। আজকে দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে রাজপথে আছে। ৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগও অংশ নিয়েছিলো। তখন কি সংবিধান লঙ্ঘিত হয়নি। মানুষের জন্য সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। আজকে মানবাধিকারের কথা বললে অপরাধ হয়ে যায়। এর জবাব একদিন এ সরকারকে দিতে হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ব গণতন্ত্রে দিবসে আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বাকস্বাধীনতা নেই। আজকে গণতন্ত্রের পক্ষে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। এ আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়, এ আন্দোলন দেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন। ৭১ মুক্তিযুদ্ধের পর এটি বড় আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন পাকিস্তানিদের সকল অনাচার অবিচারের বিরুদ্ধে জাতি যেমন এক হয়েছিলো, বর্তমানে একই কারণে দেশের মানুষ এক হয়েছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা সরকার নয়, এটি লুটেরা, খুনী ও গণতন্ত্র হত্যাকারী। আমাদের আন্দোলন কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের প্রতিপক্ষ যারা সব কিছু দখল করে রেখেছে, বিচার বিভাগকে দখল করে রেখেছে যারা দেশের মানুষকে বাইরে রেখে আবারও ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আজকে দেশের মানুষ একদিকে আর এ সরকার আরেক দিকে। দেশের মানুষ যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সে সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। এই ফ্যাসিস্ট সরকার ফিরে না যাওয়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। এদের সময় শেষ হয়ে গেছে।

সালাম বলেন, অটোপাস আর এদেশে আর হবে না। আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। স্বাধীনতার পর এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র খেয়ে ফেলেছে। সকল দল নিষিদ্ধ করেছে। আজ তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। বাংলাদেশে যতবার গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে প্রতিবারই তারা করেছে। এরশাদের স্বৈরশাসনকে বৈধতা দিয়েছে, ১/১১কে ক্ষমতায় এনেছে। দেশে যত খারাপ করেছে তা আওয়ামী লীগ করেছে। তাদের ব্যর্থতার কারণেই বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি জনগণই জনগণের দল।