Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস সবুজ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের অঢেল সম্পদ

সবুজ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষকের অঢেল সম্পদ

41

স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয় রীতিমতো দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে। এই সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতির প্রধান কারিগর বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. কাওছার আলী শেখ। শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিস বাবদ আয়ের ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৭ হাজার ৪৮৩ টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কোন রকম আবেদন ছাড়াই ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১ কোটি ১ লক্ষ ৪৮ লক্ষ ৫৫০ টাকা মওকুফ সমন্বয় নিয়েও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি।

শুধু তাই নয় নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। একাধিক বাড়ি করার পাশাপাশি বিলাসিতার জন্য কিনেছেন দামি গাড়িও। হয়েছেন একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। এসব বিষয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী আবুল কালাম অনু। অভিযোগপত্রে অভিভাবক সদস্য ওমর ফারুকসহ ৮ জন সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. কাওছার আলী শেখ ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর যাবত নিজের আস্থাভাজন ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেছেন। অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমেই তিনি এই এলাকাতেই বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়েন এবং ডেভলপার ব্যবসা গড়ে তুলেন। পরে ২০২১ সালে এডহক কমিটি এবং তারপর পূর্নাঙ্গ নতুন কমিটি গঠনের পর নতুন ম্যানেজিং কমিটি বিগত ১০ বছরের অডিট করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এ সময় অডিট রিপোর্টে আর্থিক অসঙ্গতি ও বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে আসে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিস এবং ছাত্র ছাত্রীদের সঠিক তথ্য ও নথিপত্র বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক অডিটের চাহিদা অনুযায়ী উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখানে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিস বাবদ অডিটে ১২ কোটি ৯৫ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০০ টাকার আয় হলেও অডিট নিরীক্ষীত তথ্যে ১১ কোটি ৫৩ লক্ষ ১১ হাজার ১১ টাকা পাওয়া যায়। এখানে ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৭ হাজার ৪৮৩ টাকার কোন হদিস মেলেনি। বিশাল এই আর্থিক অসঙ্গতির কোন জবাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জ, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফিস ও অন্যান্য আয়ের সঙ্গে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা মওকুফ সমন্বয় হয়েছে। তন্মধ্যে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে ১ কোটি ১ লক্ষ ৪৮ লক্ষ ৫৫০ টাকা মওকুফ করা হলেও শিক্ষার্থীদের মওকুফের আবেদন এবং ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি নেই। এখানেও আর্থিক অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা বেগমের থেকে এমপিওভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাত করেন এবং এমপিওভুক্ত করতেও ব্যর্থ হন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের ওই বছরেই করোনাকালীন সময়ে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা নগদ বিতরণের নামে ব্যাংক থেকে নগদ উত্তোলন করলেও শিক্ষকদের হিসাবে জমা বা ক্যাশ প্রদান করেননি।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আবুল কালাম অনু বলেন, আমি ম্যানেজিং কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য বিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগসমূহ তদন্ত করে দেখতে আমাদের নির্দেশ দেন। আমরা নিবন্ধিত ফার্ম দিয়ে ১০ বছরের অডিট করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর মধ্যে তিনি মাত্র ৫ বছরের অডিটের কাগজপত্র আমাদের দিয়েছেন। অডিটে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য মেলে। তাকে দু’দফা শোকজ করা হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে সময়মত আসেন না, অনেক সময়ই বিদ্যালয়ে এসে স্বাক্ষর করে বের হয়ে যান এবং সার্বক্ষণিক শিক্ষক রাজনীতিতে সময় দেন, বিভিন্ন জেলাতে ঘুরে শিক্ষক সম্মেলনে ব্যস্ত থাকেন। তিনি কম্পিউটার অপারেটর থেকে সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) পদে তার নিজ জেলার বাসিন্দা হোসেন শেখকে জাল সনদের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করেন। ২০২৩ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। একই বিষয়ে বিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্য ওমর ফারুক বলেন, নিবন্ধিত অডিট ফার্মের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতি পেয়েছি। এক সময় তিনি মেসে থাকতেন। কোন আলাদিনের চেরাগের বদৌলতে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন? তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করেন। শিক্ষক রাজনীতিকে হাতিয়ার বানিয়েছেন। তিনি সহকারী শিক্ষক আব্দুস সাত্তারের বেতন কর্তন ও শোকজ করেন এবং বেতন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন। আমরা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে দুর্নীতিবাজ ও স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।

নিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক মো. কাওছার আলী শেখ বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত না। আর ম্যানেজিং কমিটি ভুয়া ফার্ম দিয়ে অডিট করিয়েছে। আমি বারবার তাদের কাছে ফার্মের অডিট রিপোর্টের কপি চেয়েছি। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি আমাকে কোন কপি দেয়নি। কিন্তু আমার কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্টের কপি আছে, এখানে কোন দুর্নীতির সুযোগ নেই। উনারা আজকে এক মাস যাবৎ বিদ্যালয়ের ক্লার্ককে অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না। উনারা আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলছে।

অঢেল সম্পদ ও ডেভেলপার কোম্পানির মালিকানার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার। আমার এসব কিছুই নেই। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদা বেগমের থেকে এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, হেডমাস্টারের এমপিও করার সুযোগ নেই। এখানে টাকা লেনদেনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর হোসেন শেখের জাল সনদের বিষয়ে আমিই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।