Home রাজনীতি সংবিধানেই থাকতে চায় আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা

সংবিধানেই থাকতে চায় আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা

30

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বাহাস শেষ। এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন রূপরেখা কোন পদ্ধতিতে হবে, তা নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ। তবে সংবিধানের বাইরে একচুলও সরতে নারাজ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন এই দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও চায় সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচন। পাশাপাশি সংবিধানের বাইরে অন্য কোনো ফর্মুলায় জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। বিএনপি এবং তাদের শরিকরা এর পর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে।

এ অবস্থাতেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আরও প্রায় দুই বছর বাকি। ২০২৩ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দীর্ঘ সময় বাকি থাকলেও কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে সরকার এবং বিরোধী পক্ষ ইতোমধ্যে রাজপথে সরব হয়েছে।

বিরোধী পক্ষের দলগুলোর একটি অংশ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চায়। আরেকটি অংশ চায় জাতীয় সরকার। তবে আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এবং জাতীয় পার্টি সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বৃহস্পতিবার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে আমরা সব সময় ছিলাম, এখনো আছি। আর জাতীয় সরকার বলতে কী বোঝায়, তাও জানি না। দেশ পরিচালনায় যাতে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি না হয়, তাই আমরা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চাই। কে কী বলল-এসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই আমাদের মতো করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমরা চাই মানুষ তার ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করুক। মানুষ তার পছন্দের প্রার্থী বেছে নিক ভোটের মাধ্যমে। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনিব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কীভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। যাদের সংবিধানে আস্থা নেই, যারা পেছনের দড়জা দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছেন, তারা নানা ফর্মুলা দিচ্ছেন। এতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতরে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা আমাদের প্রস্তুতি শুরু করেছি।

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে নির্বাচন নিরপেক্ষ করার যুক্তি দেখিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে এই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বিধানটি বাতিল করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছিলেন। যেখানে বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু বিএনপি এতে সাড়া দেয়নি। বরং তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো রূপরেখা দেয়নি দলটি। ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবসের ৫১ বছর উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে আর নির্বাচন নয়। গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গড়ে তুলতে হবে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন চান। সম্প্রতি তিনি তার দলের কর্মসূচিতেও বলেছেন, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নেওয়ার দাবি জানাই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হয় না-এটা প্রমাণিত সত্য।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে চাই না। সংবিধানের বাইরে যাওয়া ঠিকও হবে না। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংবিধানের ভেতরে থেকেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। সংবিধানকে উপেক্ষা করে নির্বাচন-এটা কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।-যুগান্তর