Home প্রচ্ছদ সংকটের আবর্তে উচ্চশিক্ষা

সংকটের আবর্তে উচ্চশিক্ষা

53

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে উচ্চশিক্ষায় নানা ধরনের সংকট বিরাজ করছে। এর মধ্যে শিক্ষক রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি কলেজে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগও আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে উপাচার্য বা অধ্যক্ষরা সরকারি দলের নেতাদের কথামতো চলেন বলেও শোনা যায়। একইভাবে আবাসিক হল ও হোস্টেলে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের শাসন কায়েমের বিষয়েও প্রচার আছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব বিষয়ে আলোকপাত করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় এসব প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন সাবেক তিন উপাচার্য এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি

শিক্ষায় সংখ্যাগত অর্জন অনেক, নেই গুণগত মান: ড. একে আজাদ চৌধুরী

উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশের বিশাল বিস্তৃতি হয়েছে। সংখ্যার বিচারে আমরা অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থী আছে। কোনো দেশে এত জনসংখ্যাও নেই। সেই বিচারে শিক্ষায় সংখ্যাগত অর্জন অনেক। কিন্তু গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিক্ষকের গুণ, ছাত্রদের রাজনীতি ও আদর্শের দিকে তাকালে মনে হতে পারে আমাদের সেই আকাক্সক্ষা এখনো পূরণ হয়নি। মূল্যবোধের উন্নয়ন তো হয়ইনি, বরং অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং গবেষণায় খুব একটা অর্জন আমাদের নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতায় আসেন তাদের একটা মান অর্জন করতে হয়। হতে পারে কেউ অন্য চাকরি না পেয়ে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতায় আসেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। শিক্ষকতাকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে এবং পছন্দ ও পরিকল্পনা করেই একজনকে এই পেশায় আসতে হয়। অন্য চাকরি না পেয়ে এখানে আসার প্রসঙ্গ পুরোপুরি সত্য নয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় ও তদবির হয়তো কাজ করে। তবে তাও প্রকট নয়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে বলা যায়, কিছু কিছু ঘটনা থাকতে পারে, তবে তা ‘র‌্যানডম’ (সাধারণ চিত্র) নয়। আর নিয়োগের জন্য তদবির করা হলেও এখানে ব্যবস্থাটা এমন যে, প্রার্থীকে ন্যূনতম একাডেমিক রেজাল্ট নিয়েই আবেদন করতে হয়। একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড’র (মান) নিচে নামা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে শয্যা সংখ্যায় ঘাটতি আছে। ছাত্রছাত্রীদের হলে এক বা দুই সিটবিশিষ্ট কক্ষ এখন আর তেমন মুখ্য বিষয় নয়। সেখানে চারজনের সিটে আটজন থাকে। আছে গণরুম। আসলে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। ‘গণরুম’ শব্দটা আমাদের জন্য একটা লজ্জার বিষয়। সেখানে বসবাস নিয়ে নানান কথা আছে।

একটা কথা বলে রাখা ভালো। শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। এর একটা হচ্ছে আদর্শের জন্য লেখাপড়া। সুকুমারবৃত্তির চর্চা, মানবিকতার বিকাশ ও মূল্যবোধ লালন একটা উদ্দেশ্য। আরেকটা হচ্ছে, প্রায়োগিক দিক। এর মধ্যে আসে চাকরি, নিয়োগ ও কর্ম ইত্যাদি। এই দুটির সমন্বয় করেই শিক্ষা অগ্রসর হয়। কিন্তু বর্তমানে মনে হচ্ছে, মানবিক মূল্যবোধ আর সামাজিক নৈতিক আদর্শের দিকটি অনেকটা পিছিয়ে গেছে। তবে এগুলো কীভাবে জাতীয় জীবনে ফের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পুনঃস্থাপন করা যায় সেটা ভাবতে হবে। আদর্শ আর নৈতিকতার প্রসঙ্গে কেবল শিক্ষাঙ্গনের কথা বলব কেন, গোটা সমাজেই তো এর একটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সংখ্যাগত অর্জন অনেক হয়েছে। গুণ, মান ও আদর্শের দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। মূল্যবোধ ও প্রায়োগিক শিক্ষার জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এ ক্ষেত্রে সরকার সহায়কের ভূমিকায় থাকতে পারে। কিন্তু মূল কাজটি শিক্ষকদেরই করতে হবে। এসব করা না হলে বেকারের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি সমাজে অস্থিরতা তৈরি হবে। পাশাপাশি সমাজে অনেক রকম ঘটনা ঘটবে। যা শিক্ষকদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। যেহেতু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ অনেক কিছু হয়েছে, এখন নৈতিক ও মূল্যবোধের উন্নয়নের জন্য শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতেই হবে। যে আদর্শ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তা যদি সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব। এই আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে তুললে সংকট তৈরি হবে না।

বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সমস্যা বিরাজমান আছে তা দূর করতে শিক্ষায় যথাযথ বিনিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করে ঢাবির সাবেক এ উপাচার্য বলেন, জাতীয় বাজেট আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেড়েছে। এখন ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট হচ্ছে। টাকার অঙ্কে হয়তো শিক্ষা খাতেও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে হারে বাজেট বেড়েছে সেই বিবেচনায় আনুপাতিক হারে শিক্ষায় টাকার অঙ্কের বরাদ্দ বেড়েছে কিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জিডিপির ৪ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দের কথা বলেছেন অর্ধশত বছর আগে। এখনকার বাস্তবতায় আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন। সেটা তো হয়নি, বরং এখনো ২ থেকে ২ দশমিক ২ ভাগের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছি। আবার যেটা শিক্ষায় বরাদ্দ হয়, তার মধ্যে অন্যান্য ভাগও যুক্ত হয়। যদি জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা হতো তাহলে আবাসিক হল কেন, গবেষণাসহ নানান খাতে অনেক বরাদ্দ দেওয়া যেত। ছাত্র-শিক্ষকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চাকরির সংস্থানও হতো। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূর করতে হলে বাজেটে সেভাবে বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, শিক্ষা এখনো সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার নয়। গার্মেন্ট, কর্মসংস্থান, অদক্ষ শ্রমশক্তিসহ যেসব দিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটাও দরকার আছে। কিন্তু শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ২০৪১ সালের একটা রূপকল্প আমরা নির্ধারণ করেছি। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঠিক করে দিয়েছে। আমরা এসব অর্জন করতে চাইলে ‘ইনক্লুসিভ’ (সমন্বিত) উন্নয়ন করতে হবে। আর সেজন্য শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভবিষ্যৎ জনশক্তিকে প্রস্তুত করতে হলে তাদের কারিগরি জ্ঞান দিতে হবে। পাশাপাশি নৈতিক, আদর্শ ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন করে তুলতে হবে। শিক্ষায় যথাযথ ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন করে শিক্ষাক্রম ও আনুষঙ্গিক দিক উন্নয়ন করতে হবে। তাহলেই জাতি এগোবে বলে মনে করি।

যোগ্যদের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে: আআমস আরেফিন সিদ্দিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, তদবির বা কারও চাপে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এটা কোনোভাবেই আমাদের ছাত্রদের কল্যাণে আসবে না। একজন শিক্ষক তিনি সব সময়ই শিক্ষক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থের কথা চিন্তা করে নিরপেক্ষভাবে যিনি যোগ্য, তাকেই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম-কানুনের শৈথিল্য বা নীতি-নৈতিকতায় ছাড় দেওয়া- এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বার্থে শিক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের যে শিক্ষার মান, এটার উন্নয়নে বিনিয়োগের বিশেষ প্রয়োজন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশাসনে যারা আছেন তাদের যত্নশীল হতে হবে। এমন কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া দরকার যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করেন। তারা যেন আন্তরিকভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে একটা পরিবারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। এই ধরনের মনমানসিকতাসম্পন্ন মানুষদের নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, গণরুম তো ছিল না। গণরুম হঠাৎ করে এসেছে তার একটা বড় কারণ হলো আমরা সব শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধা দিতে পারিনি। যদি হলের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আসন সংরক্ষিত রাখা যেত তাহলে গণরুমের এ প্রয়োজন হতো না। এখানে সমস্যা হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে আবাসিক সুবিধাটা দেওয়া যাচ্ছে না। একই কক্ষে অনেককে থাকতে হচ্ছে। আর এই সুযোগটা নিচ্ছে আবার কিছু ছাত্র নামধারী নেতা। এরা হয়তো কোনো একটা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আছে। কিন্তু এরা আবার নিজের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এখানে প্রশাসনকে শক্ত ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হবে। ছাত্র সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদেরও বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখতে হবে। গণরুম কালচার সৃষ্টি করে ছাত্রদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা, অন্যায়ভাবে কাউকে সুযোগ দেওয়া আবার কাউকে না দেওয়া-এগুলো তো ছাত্র নেতৃত্বের কাজ নয়। ছাত্র নেতৃত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর ছাত্রনেতাদের চাপ সৃষ্টির বিষয়েও সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, প্রশাসন যদি দুর্বল হয়, প্রশাসন যদি ছাত্র নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করে, তাদের (ছাত্রনেতাদের) দিয়ে কিছু অন্যায়-অপকর্ম করতে চায় তখনই এই সমস্যাটা দেখা দেয়। যদি সৎভাবে প্রশাসন চালায় এবং নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলে তাহলে ছাত্র নেতৃত্বের এই অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তদবিরের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষক যখন নিয়োগ পাচ্ছেন তিনি ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে পড়াবেন সেজন্যই শুধু নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের রোলমডেল হিসাবে। শিক্ষায় যেমন তারা পারদর্শী থাকবেন, একইভাবে মানুষ হিসাবে ভালো, আচরণে ভালো এবং তাদের সৎ হতে হবে। যাকে দেখে শিক্ষার্থীরা শিখবে সেই ধরনের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হোক, মহাবিদ্যালয় হোক অথবা বিদ্যালয়ে।

সরকার প্রশ্রয় দিলে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়: মাহমুদুর রহমান মান্না

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সংকট আছে, এটা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। এখানে নানা করণে লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখলদারদের হাতে জিম্মি। ভর্তি বাণিজ্যসহ আরও অনেক সমস্যা বিদ্যমান। বিরোধী দল, বিরোধী ছাত্রসংগঠন-সবাই এসব কথা বলছে। এখন সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন। তবে আমি মনে করি, তারা এসব না বলে ব্যবস্থা নেবেন, এটা জনগনের প্রত্যাশা। তারা দায়িত্বে আছেন, এগুলো ঠিক করাও তাদের কাজেরই অংশ। উপাচার্যসহ শিক্ষকদের মর্যাদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে কিছু সংবাদ আমরা দেখতে পাই, যা হতাশাজনক। এটা আসলে শিক্ষক রাজনীতির ফসল। শিক্ষক রাজনীতিতে দলবাজি একটা বড় সমস্যা। নীল দল, সাদা দল ইত্যাদি নাম করে সব সময় ক্ষমতাচর্চা করা হয়। এটি শিক্ষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে; নীতি-নৈতিকতার সংকট তৈরি করেছে। অভিযোগ আছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি হয় না। আবার দেওয়া হলেও বিরোধী মতের শিক্ষকরা তা সময়মতো পান না। এসব কারণে শিক্ষকরাও আত্মসমর্পণে বাধ্য হচ্ছেন। তবু শিক্ষকদের কাছে আবেদন করব, তারা যেন বিবেকের প্রতিফলন ঘটান। তারা যদি নেহায়েত বাঁচার তাগিদে ও পেশাগত প্রয়োজনে এভাবে নতিস্বীকার করেন বা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেন, তাহলে জাতি যাবে কোথায়? বরং শিক্ষকদের উচিত হবে এসব অপচর্চার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলা। আর সরকারের কাছে আবেদন করে কোনো লাভ হবে কি না, জানি না। তবে এটাই সত্য, সরকার যদি প্রশ্রয় দেয়, তাহলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সব ছাত্রনেতা একধরনের হয় না। সবাই আবাসিক হলে গণরুম সংক্রান্ত চর্চা করে না। অনেক ছাত্র সংগঠনের নেতার নাম বলতে পারব, যাদের এসব বদনাম নেই।

তদবিরে উপাচার্য হলে ছাত্রদের কথায় চলতে হয়: ড. মীজানুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অবস্থান এমন থাকতে হয়, যেন কোনো ছাত্র তাকে প্রভাবিত করতে না পারে। যারা তদবির করে উপাচার্য হন, অনেক সময় ছাত্রদের কথায় তাদের উঠতে-বসতে হয়। যারা ছাত্রদের কথায় উঠে বসে, তাদের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্য। দেশের উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। এসব আমরা বলি। কিন্তু তা সমাধানে কী উদ্যোগ আছে। আমি মনে করি, সার্বিকভাবে শিক্ষা খাতে বাজেট ও জনবল আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষকতার পেশাকে যদি আরও আকর্ষণীয় করা না যায়, তাহলে মেধাবীরা এই পেশায় আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যদি দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অন্য পেশার মতো যদি ভালো হতো কিংবা আরও সম্মানজনক হতো, তাহলে মেধাবীরা তাদের প্রথম পছন্দ রাখত শিক্ষকতাকে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে পারিনি। যখন দেখা যায় কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১৬তম গ্রেডে বেতনভাতা পান, তখন সমাজে তাদের তেমন একটা সম্মানজনক অবস্থা থাকে না। এখানেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসে যায়। বেতন ও সুবিধাসহ সার্বিক মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে যদি এই পেশাকে আকর্ষণীয় করা যায়, তবে এমনিতেই মেধাবীরা এদিকে আসার আগ্রহ দেখাবে।

তবে এটা ঠিক যে, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে। শিক্ষা খাতে দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয় করার কথা। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ আবার কখনো এরও কম ব্যয় হয়। নেপাল, ভুটান এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ। শিক্ষার মানের আরেক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত। দেশে যে হারে ছাত্রের সংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে স্কুল পর্যায়ে একজন শিক্ষককে ক্লাসে ১০-১৫ জন ছাত্রকে পড়াতে হয়। অথচ আমাদের দেশে ৫০-৬০ জন ছাত্রকে পড়াতে হয়।

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাতে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়েও অনেকে আক্ষেপ করে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর ৫০০ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কিন্তু আমরা যদি এর বিপরীত দিকে তাকাই তাহলে দেখব, যেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ওই ৫শর মধ্যে আছে, সেসব দেশের তুলনায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রের বরাদ্দ বিশ্বের ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও পড়ে না। গবেষণা ও বিভিন্ন খাতে যে বরাদ্দ দেয়, এটি অত্যন্ত কম। বরাদ্দ বা শিক্ষা খাতে ব্যয় যত কম হবে, মানও তত কমে যাবে।-যুগান্তর