Home জাতীয় শ্রমজীবী মানুষের বিনা সঞ্চয়ে পেনশন দিতে হবে: ক্ষেতমজুর সমিতি

শ্রমজীবী মানুষের বিনা সঞ্চয়ে পেনশন দিতে হবে: ক্ষেতমজুর সমিতি

36

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির দুদিনব্যাপী বর্ধিত সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও গ্রামের শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে অতীতের তুলনায় বেশী পরিশ্রম করেও সংসার চালাতে, চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারছে না। সরকার বর্তমানে পেনশনের কথা বললেও গরিব মানুষ তা দিতে পারবে কি না তা বিবেচনায় নেয়নি। বরং সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে চমক দেখানো ও পেনশন স্কিম থেকে ঋণ নিয়ে অন্যান্য ঋণ পরিশোধের জন্যই এই আয়োজন। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে শ্রমজীবী মানুষের বয়স ষাট হলেই তাদের বিনা সঞ্চয়ে পেনশন দেওয়ার দাবি করেন।
দুদিনব্যাপী সভায় সভাপতিত্ব করেন ক্ষেতমজর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান। কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা। সাংগঠনিক রিপোর্ট উত্থাপন করেন সহ সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার। সভায় শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতালেব হোসেন। সভায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় আগামী ১৯ অক্টোবর ‘দাবী দিবস‘ পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিনা সঞ্চয়ে পেনশন, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, গ্রামীণ বরাদ্দ লুটপাট বন্ধ, দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ক্ষেতমজুরদের বেঁচে থাকার দাবিতে এ দিবস পালিত হবে।
সভায় রিপোর্টের ওপর আলোচনায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুররা দেশের সবচেয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠী। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্বগতি, লুটপাট-দুর্নীতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সাধারণ মানুষের ‘বাঁচার মতো বেঁচে াকার’ সংগ্রামকে বিজয়ী করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গত করোনায় নতুন করে ১৯ হাজার কোটিপতি হয়েছে। ঔষধ কোম্পানিগুলো লক্ষ-কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অন্যদিকে বেশীর ভাগ মানুষ নিঃস্ব থেকে আরো নিঃস্ব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জমি বর্গা দেওয়া যায়, কিন্তু স্বার্থ বর্গা দেওয়া যায় না’।
সভায় দ্বিতীয় দিনে ‘গ্রামীণ অর্থনীতি’ বিষয়ক আলোচনা করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ। তিনি গ্রামীণ অর্থনীতির বিভিন্ন পরিবর্তন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের যে গরিব মানুষ পাচ্ছে না তা তুলে ধরেন।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবছর বাজেট হয়, হাজার কোটি থেকে লক্ষ কোটি বাজেট বাড়ে কিন্তু গরিবের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। কারণ বাজেটের বড় অংশ লুটপাট হয়ে যায়। গরিব মানুষের হাতে সে বাজেটের অংশ পৌঁছায় না। গ্রামীণ বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের নামে যে বাজেট করা হয় তার যথাযথ বাস্তবায়ন হলেও অন্তত কিছু মানুষ বছরের কয়েক মাস কাজ ও খাদ্যের সংস্থান পেতো। কিন্তু সেখানেও চলে ঘুষ, দুর্নীতি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার কার্ড করতে ঘুষ লাগে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার সার্বজনীন পেনশন আইন করেছেন, কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের বিনা সঞ্চয়ে পেনশনে তাঁদের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিক দাবি সরকার মেনে নেয়নি। তারা অবিলম্বে ‘বয়স ৬০ হলেই মজুরদের জমাবিহীন পেনশন’, ন্যায্য মজুরি ও সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা এবং গ্রামীণ বরাদ্দ লুটপাট বন্ধ ও পল্লী রেশনিং চালুর দাবী জানান।
জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরেশ কর, মৃন্ময় মন্ডল, মোজাহারুল হক, শাহাবুদ্দিন আহমদ, কল্লোল বণিক, আব্দুর রউফ, নলিনী সরকার, শ্রীকান্ত মাহাতো, নির্মল চৌধুরী, আব্দুল করিম, হারুন আল বারী, ইসমাইল হোসেন, শেখ সুলতান, সেকান্দার আলী মন্ডল, মাসুম ইবনে শফিক, শহীদুল ইসলাম, আজিমউদ্দিন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।