Home রাজনীতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

46

স্টাফ রিপোর্টার: যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে বাংলার মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস। দিনটি উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও টুঙ্গিপাড়ায় সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকেই ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ায় মাজারে নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের ঢল। সারা দেশেই ব্যাপক আনন্দমুখর কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। দিবসটি উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের ওপর আলোচনা সভা, কেক কাটা, মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথও উচ্চারিত হয়েছে সবার কণ্ঠে।
এদিন ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে রাষ্ট্রপতি হামিদ বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং এর পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতির পত্নী রাশিদা খানম তাঁর পুত্র রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এবং প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর মাজারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ। এছাড়া আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এদিন দেশের সর্বস্তরের মানুষরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জনতার ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও তার আশপাশের এলাকা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, কোরআনখানি, বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আজ বাদ জুমা বায়তুল মুকাররমে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নসের গভর্নর হাফেজ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মুনাজাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহা. বশিরুল আলম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মো. মনিরুজ্জামান, পরিচালকবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সাধারন মুসল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
রাজধানীর মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা সভা করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক আরোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সভায় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত কবি রফিক আজাদের ‘এই সিঁড়ি’ কবিতার আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। এদিন দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। এদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ৬৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ডেমরার নরাইবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় ইউনিট আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি রহুল আমিন মোল্লা। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের ৬৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও কেক কেটে ৬ নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান টিটু, ৫নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব আলম মানিক, ৬ নং ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. শামিম মিয়া প্রমূখ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে মেট্রোরেলে ও ছাদখোলা বাসে আনন্দভ্রমণের আয়োজন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ দিন একঝাঁক এতিম-পথশিশু মেট্রোরেলে আগারগাঁও-উত্তরা উত্তর-আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করে। এর মধ্যে উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি কেকও কাটা হয়। পরে তারা ছাদখোলা বাসে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখে। তেজগাঁও ও মিরপুরের দুটি এতিমখানা থেকে ৭০ জন শিশু এই আনন্দভ্রমণে অংশগ্রহণ করে।