Home মতামত শীতকাল ও পথশিশু

শীতকাল ও পথশিশু

22

এস. এম ছাব্বির হোসেন: আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার। শিশুরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ করবে এটাই সবার কাম্য। প্রতিটি শিশুর মাঝে সুপ্ত প্রতিভা লুকায়িত থাকে যা বিকশিত করে একটি শিশু আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। অথচ সেই শিশুরা রাতের আঁধারে ঘন কুয়াশায় ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনের পাশের বস্তি, লঞ্চঘাট, খোলা মাঠ প্রভৃতি স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্নের চাহিদা হয়তো তাদের কোনোভাবে মিটে যায় কিন্তু কনকনে শীতে নিজের শরীর উষ্ণ রাখার জন্য কোনো শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য তাদের নেই।

উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা লেপ, কম্বলের নিচে শুয়ে আরামদায়ক ঘুম দিতে পারে কিন্তু পথশিশুরা রাতে রাস্তার পাশে কোনো একটা পাতলা কাপড় গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা কোনো পথচারী মাঝে-মধ্যে তাদের আবর্জনার স্তূপ ভেবেও ভুল করে কারণ তাদের শীতের কাপড়ের এতই অভাব যে সামান্য কাপড়টুকু দিয়েই সারা শরীর ঢেকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে হয়। তাই গ্রামবাংলার ভাষায় বলা যায়:
‘পৌষ গেল, মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক,
দুঃখীর না পোহায় রাতি হইলো বড় দুঃখ।’

একটি শিশু বড় হওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু পথশিশুদের নিজেদের জীবনধারণের জন্য যে মৌলিক চাহিদা যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন প্রয়োজন, সেগুলো তারা তাদের পরিবারের কাছ থেকে পায় না বরং জীবিকানির্বাহের জন্য খুব ভোরে তাদের বেরিয়ে পড়তে হয় কাজে। এদের মধ্যে কেউ কেউ পানির বোতল, ফুল বিক্রি করে থাকে, কেউ আবার দুইবেলার খাবারের জন্য সারা দিন খাবারের হোটেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এরকম হাজার হাজার পথশিশু সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে।

প্রথমত, ঘন কুয়াশা ও শীতের বাতাসে তাদের রাতে ভালো করে ঘুম হয় না। দ্বিতীয়ত, কনকনে শীতে শীত বস্ত্রহীন তারা অসহায় হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে আবর্জনার স্তূপের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে শরীরকে উষ্ণ করার চেষ্টা করে কিন্তু শরীরকে গরম রাখার স্থায়িত্বটা ক্ষণস্থায়ী হয়। ফলে পথশিশুরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। সমাজের বিত্তশালীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উচিত শীতবস্ত্র বিতরণ করে পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানো। শীতকালে পথশিশুকে ফুটপাতে, পরিত্যক্ত পথের পাশে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের ঘৃণা করা উচিত নয় বরং অকৃত্রিম ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও সহানুভূতিশীল মনোভাব নিয়ে পাশে থাকা দরকার।

-লেখক: এস. এম ছাব্বির হোসেন, সাংবাদিক ও ব্লগার, কয়রা, খুলনা।