স্টাফ রিপোটার: কমরেড খালেকুজ্জামান বলেছেন, শ্রমিকরা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আজীবন আয়ের মানদন্ডে ক্ষতিপূরণসহ শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে দীর্ঘদিন যাবত লড়াই চালিয়ে আসছে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট শ্রমিকদের শ্রমাধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াইকে শোষণ-বৈষম্য আর নিপিড়নের সমাজ পরিবর্তনের লড়ায়ে রুপান্তরের জন্য সারাদেশে কাজ করছে। তিনি বলেন, দেশের ১০৫টি স্বীকৃত শ্রম খাতের মধ্যে মাত্র ৪৩ টির জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয় তাও নিয়মিত নয়। দেশে চার শতাধিক ধরণের কাজে শ্রমিকরা নিযুক্ত থাকলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এই শ্রমিকদের নেই কোনো স্বীকৃতি। শিল্প সম্পর্কের চর্চা এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির নিয়ন্ত্রণে। যাদের শ্রমে সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে রাস্ট্র এবং সমাজে তারাই উপেক্ষিত, তারাই নিরাপত্তাহীন।
শুক্রবার ১৯ মে বিকাল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সম্মেলনের উদ্বোধন কালে একথা বলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান।
উদ্বোধন ও অতিথিবরণ শেষে সভাপতি রাজেকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভারতের ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড অশোক ঘোঘ, সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস এর জাতীয় সম্পাদক প্রশান্ত নন্দি চৌধুরী, অল ইন্ডিয়া সেন্ট্রাল কাউন্সিল ট্রেড ইউনিয়নস এর জাতীয় সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু, ডাবিøউ এফ টি ইউ এর প্রেসেডিয়াম সদস্য মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, স্কপ যুগ্ম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের হাওলাদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এর সহ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, শাহাজাহান তালুকদার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সঙ্ঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাথারণ সম্পাদক নঈমুল আহসান জুয়েল, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপিত মোশরেফা মিশু। জার্মানীর এম.এল,পি,ডি, গেøাবাল লেবার ইউনিভার্সিটি অনলাইন একাডেমি, শ্রীলঙ্কার ইন্টার কম্পানি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এবং অল নেপাল ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন প্রেরিত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু নাঈম খান বিপ্লব, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাস্ট্রের উন্নয়নের গল্প শোনা গেলেও নতুন করে দেড় কোটি মানুষের জীবনমান নেমেছে দ্রারিদ্র সীমার নিচে। লুটপাট এর শ্রম শোষণের চিত্র কে আড়াল করতে সৃষ্টি করা হয়েছে দ্বীদলিয় ক্ষমতা দখলের ধু¤্রজাল। ফলে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন শক্তিশালী করা ছাড়া বিদ্যমান শাসক গোষ্ঠির কাছ থেকে শ্রমাধিকারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, খাদ্য ও জ¦ালানীর মত মৌলিক পণ্যের অত্যাধিক মুল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিক শ্রেণীর দারিদ্র, অপুষ্টি ও ক্ষুধা বেড়েছে, শ্রমিকদের জীবনমান অর্ধেকে নেমেছে। একই সময়ে সা¤্রাজ্যবাদীরা এবং পুঁজিবাদীরা বিশ্বব্যাপী সম্পদ দখল এবং তাদের ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা অর্জনের জন্য শুরু করা যুদ্ধের মধ্যেমে জনজীবনকে বিশেষভাবে শ্রমজীবী মানুষদের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে ফেলেছে। ফলে শ্রমিকদের উপর মুদ্রস্ফীতি, যুদ্ধ ব্যায়ের বোঝা ক্রমাগত শ্রমজীবী মানুষের উপর চাপাচ্ছে এবং তাদের কন্ঠরোধ করার জন্য বিভিন্ন কালাকানুন প্রণয়নের চেষ্টা করছে। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে শোষণ বিরোধী আন্দোলন, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার আন্দোলন শক্তিশালী করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে দেশে দেশে মুক্তি আকাংখি শ্রমিক শ্রেনীর সংহতি। নেতৃবৃন্দ শ্রমিকের কন্ঠ রোধের যেকোন প্রচেষ্টা সহ্য করা হবেনা বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
আলোচনা সভা শেষে কমরেড খালেকুজ্জামান ২০২৩-২৫ মেয়াদে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির নব নির্বাচীত কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। নবনির্বাচীত নেতৃবৃন্দ হলেন সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, সহ-সভাপতি ওসমান আলী, সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি শাহজাহান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সহ- সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, সহ- সম্পাদক নবকুমার কর্মকার, সহ- সম্পাদক জনার্দন দত্ত নান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, অর্থ সম্পাদক আবু নাঈম খান বিপ্লব, দপ্তর সম্পাদক সৌমিত্র কুমার দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার আলী, কৃষি শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সাঈফুজ্জামান টুটুল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. বিমল চন্দ্র দাস, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য আফজাল হোসেন, রতন মিয়া, আবু জাফর, রাহাত আহমেদ, আবুল হাসান, এস. এম. কাদির, দীপাঙ্কর ঘোষ, কিবরিয়া হোসেন, কহিনুর আক্তার কণা, ও শ্যামল বর্মন ।
সমাবেশ শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বটতলা নাট্য গ্রুপ নাটক যতুগৃহ পরিবেশন করেন।।
