Home জাতীয় লতা সমাদ্দারের ওপর সংঘটিত ঘটনা সাম্প্রদায়িক আচরণের নগ্নরূপ

লতা সমাদ্দারের ওপর সংঘটিত ঘটনা সাম্প্রদায়িক আচরণের নগ্নরূপ

54

ডেস্ক রিপোর্ট: তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দারকে হেনস্তার ঘটনা সাম্প্রদায়িক আচরণের নগ্নরূপ। সাংবিধানিকভাবেই প্রত্যেক নারী-পুরুষের নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজপোশাক নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। লতা সমাদ্দারকে হেনস্তাকারী পুলিশ সদস্যকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা আওতায় আনতে হবে।

সোমবার (৪ এপ্রিল) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও জনউদ্যোগের যৌথ প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমরা গণবিক্ষোভের আয়োজন করব।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমীর সভানেত্রীত্বে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা লুনা নূর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সমন্বয়কারী নাসরিন বেগম, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিউলি সিকদার, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের সমন্বয়ক সঞ্চিতা তালুকদার, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি মাহমুদা আকন্দসহ আরও অনেকে।

সভানেত্রী শাহনাজ সুমী তার বক্তব্যে বলেন, নারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত করতে ধর্ম ব্যবসায়ী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠী প্রায়ই নারীর পোশাকআশাক নিয়ে জনসমক্ষে আপত্তিকর আচরণ করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংস ও যৌন আক্রমণ চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, উল্লিখিত হয়রানিকারী পুলিশ বাহিনীতে ওই গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব করছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত বলেন, কেবল টিপ পরার কারণে একজন নারী শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়া এবং তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা বাংলাদেশের আইনে স্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

জাতীয় আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে। এই ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক ও উন্নত বাংলাদেশ। অথচ এখন মেয়েরা টিপ পরলে দোষ, সাইকেল চালালে দোষ। মেয়েরা যা করবে তাই দোষ। যা সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মানছি না। লতা সমাদ্দারের ঘটনাসহ প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার চাই।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সমন্বয়কারী নাসরিন বেগম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’। কিন্তু হয়রানিকারী স্পষ্টতই প্রজাতন্ত্রের চাকুরির সাংবিধানিক শর্ত লঙ্ঘন করেছেন, যা যে কোনো বিবেচনায় মারাত্মক অপরাধ।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, টিপ পরা বাংলাদেশের সংস্কৃতি। কোনো ধর্মীয় সংস্কৃতি নয়। আমরা বাংলার হিন্দু মুসলমান সবার আগে মানুষ। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে দেখতে পাই, একজন শিক্ষক টিপ পরার কারণে অসদাচরণের শিকার হন। ওই পুলিশ সদস্য শুধু অসদাচরণ করেই ক্ষান্ত হননি। সেই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন এবং শরীরের ওপর গাড়ি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।

জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সরকার ও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতা আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করছে। এ থেকে মুক্তি না পেলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবেই অন্ধকার। তাই অবশ্যই সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ওই পুলিশ সদস্যকে খুঁজে বের করে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।