Home রাজনীতি লজ্জা শরম থাকলে এই সরকার আর সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা মুখে আনতে পারে...

লজ্জা শরম থাকলে এই সরকার আর সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা মুখে আনতে পারে না: জি এম কাদের

41

বগুড়া অফিস: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের এক সাথে কথা বলতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধণ করে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়ে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা এমনভাবে সাজিয়েছে যে, তাদের ইচ্ছের বাইরে নির্বাচনের ফলাফল অসম্ভব। এ কাজে সরকারে বিভিন্ন পেশার পছন্দের মানুষ যুক্ত করা হয়েছে যাদের আমরা বলছি আওয়ামী লীগ প্লাস। এখন নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগ দ্বারা, আওয়ামী লীগের জন্য সরকার নির্বাচন করা হচ্ছে। যারা আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করছে। এখন গণতন্ত্রের নামে আওয়ামীতন্ত্র চলছে। ডেমক্রেসির বিপরীতে আওয়মীক্রেসি চলছে। তারা জবাবদিহিতা করতে চায় না। জাতীয় রাজনীতি এখন সংঘাতময়। সরকার গায়ের জোরে, সংবিধান সংশোধন করে কিছু আইন করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সরকার কুক্ষিগত করেছে। নিজস্ব লোক দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে। সরকার যে ফল চাইবে, নির্বাচন কমিশন তাই ঘোষণা করবে। সাজানো নির্বাচন ব্যবস্থায় শুধু সিলেকশন হতে পারে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আর বিএনপি বলেছে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দরকার। কিন্তু সরকার বলছে, তারা সংবিধানের বাইরে এবং অনির্বাচিত সরকারের অধিনে নির্বাচন করবে না। যারা আন্দোলন করবে, তাদের প্রতিহত করা হবে। সরকার সাজানো নির্বাচন করতে চায়। শুধু আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই বলছে, সঠিক নির্বাচন হচ্ছে না। তারপরও সরকার বলছে, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। যখন বিদেশীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাতে রাজধানীতে কাজ করছে তখন ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ঢাকা ১৭ আসনে সব অনিয়মই হয়েছে। সরকার বলেছে শতকরা ১০ ভাগ ভোট পড়েছে, সাধারণ মানুষ বলছে ১ থেকে ২ ভাগ ভোট পড়েছে। ঢাকা ১৭ আসনে বস্তির লোক এনে সিল মারা হয়েছে। ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হচ্ছে। লজ্জা শরম থাকলে এই সরকার আর সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা মুখে আনতে পারে না। বাংলাদেশে অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত সরকারের অধিনে নির্বাচনের জন্য দুইবার আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। ১৯৯০ সালে একটি হয়েছিলো সাংবিধানিক ভাবে বৈধ জাতীয় পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে। তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম দলগুলোর জোট অসাংবিধানিক সরকারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এসময় হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো তারা। সেই আন্দোলনে মানুষ মারা গেছে। ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন হয়েছিলো তা অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে হয়েছে। কিন্তু জনগণ সেই নির্বাচন গ্রহণ করেছে। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে আরেকটি আন্দোলন করেছিলাম আওয়ামী লীগ ও আমরা। তখন বিএনপি তত্বাবধায়ক সরকার পক্ষপাতদুষ্টু করেছিলো। তখন আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনে মানুষ হত্যা হয়েছিলো। তার ফলে বিএনপি সেই নির্বাচন করতে পারেনি। তখন ওয়ান-ইলেভেন নামে একটি অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার গঠন হয়েছিলো। তাদের অধিনে ২০০৮ সালে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেছিলো। এতে জনগনের ভোটে মহাজোট সরকার সরকার গঠন হয়। তাই সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ যা বলছে তার কোন যুক্তি নেই। আওয়ামী লীগ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, অনির্বাচিত সরকারের অধিনে নির্বাচন হবে না। আমি আদালতের রায় পড়িনি তবে, তাদের বক্তেব্যের জবাবে বলছি… ৯১ সালে একটি অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। তখন বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়েছিলো, জনগণ তা মেনে নিয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি যে নির্বাচন করেছে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আওয়ামী লীগ ও আমরা তার প্রতিবাদ করিছিলাম। নির্বাচিত সরকারের অধীনের সেই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার পদত্যাগ করে তখন আবার অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিলো। ২০০৮ সালের অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার জনগণ মেনে নিয়েছিলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট হয়নি। বাকি যে সব আসনে নির্বাচন হয়েছিলো সেখানেও খুব বেশি ভোটার আসে নাই। সাধারন মানুষ সেই নির্বাচনকে জনগণের ভোটের নির্বাচন মনে করে নাই যদিও সেই নির্বাচন আইনগতভাবে বৈধ। ২০১৮ সালের নির্বাচনও আইনগতভাবে বৈধ কিন্তু সেই নির্বাচনকে সাধারণ মানুষ জনগনের ভোটের নির্বাচন মনে করে না। সংবিধানে বলা আছে, দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন। সংবিধানে জনগনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন হবে। যদি একটি নির্বাচন আইনে বৈধ বলা হয় আর জনগণ তা মেনে না নেয় তাহলে বুঝতে হবে আইনের মাঝে কোন গলদ আছে। অনেক দেশে শতকরা ৫১ ভাগ ভোট না হলে তা গ্রহণ করা হয় না। আবার অনেক দেশে সবাই ভোট না দিলে জরিমানা করা হয়। তারা জনগণকে নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চায়।

আজ দুপুরে বগুড়ার টিটু মিলনায়তনে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, জাতীয় পার্টি রাজপথে নেই, এটা হলো বাস্তবতা। ঘরে বসে থাকলে দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে রেহাই পাওয়া যাবে? দুর্নীতিতে ছেঁয়ে গেছে দেশ। সাধারণ মানুষ সুবিচার ও ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। কেউ অধিকার চাইলে দমন-পিড়ন চালানো হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে বসে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে? দেশের মানুষ বিকল্প চাচ্ছে, আমরা বিকল্প শক্তি হতে পারিনি। যারা আজ জণগনের পক্ষে কথা বলছে, সাহস করে রাজপথে নেমেছে জনগণ তাদের ত্রাণকর্তা মনে করছে। যদিও অতীত ইতিহাস হচ্ছে তারাও ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতই, দলীয়করণ, লুটপাট ও টেন্ডারবাজী করেছে। যারা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না তারা কী আমাদের ভোট দিচ্ছে? সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাণকর্তা হিসেবে আমরা প্রমাণ দিতে পারিনি। জাতীয় পার্টির উন্নয়ণের কথা জনগণের মনে আছে কিন্তু জনগনের জন্য তো এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ দরকার। দুর্নীতি ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। আমাদের আরো শক্তি অর্জন জরুরী, জনগনের স্বার্থে আমাদের মাঠে থাকতে হবে।

বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপির সভাপতিত্বে এবং চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর এর পরিচালনায়- সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মাননীয় চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা এডভোকেট নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন – মন্টু পরশী, লুৎফর রহমান স্বপন, মোঃ বেলাল আহমেদ, মোঃ হুসাইন সঞ্চয়, মোছাঃ আসমা আক্তার, প্রতীক, এইচ এম ইকবাল, এরফান, ওমর ফারুক, ফেরদৌস হাসান সুমন, মারুফ তালুকদার প্রিন্স, আবু তাহের আহমেদ, গোলাম রাব্বানী রতন, অধ্যক্ষ মোকছেদুল আলম।

উপস্থিত ছিলেন – জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ জহিরুল ইসলাম জহির, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য – বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, একেএম আমিনুল ইসলাম পিন্টু, ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমান খান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মোঃ বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল ফারুক, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক তিতাস মোস্তফা, যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ এডভোকেট আবু তৈয়ব, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশের মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা-জি এম বাবু, আল মামুন, সারোয়ার হোসেন শাহীন, আব্দুর রাজ্জাক, মশিউর রহমান, মাইনুল রাব্বী চৌধুরী রুমন, মোমিনুদৌল্লাহ সমাজী, ঈশান, স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের নেতা আজিজ আহমেদ রুবেল, আরিফুর ইসলাম শহিদ, আহসান হাবীব, সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।