Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস রিক্তা হত্যায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

রিক্তা হত্যায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

54

মো.পাভেল ইসলাম রাজশাহীঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ছাত্রী রিক্তা খাতুনকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছে আইন বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যমতে রিক্তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে চিকিৎসকদের বরাতে এমন তথ্য জানার পরে মানববন্ধন করেন তারা।

রবিবার (৩১ জুলাই) সকাল ১১ টায় রাবির প্যারিস রোডে সিনেট ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিক্তার ‘হত্যাকারী’ তার স্বামী আবদুল্লাহ ইশতিয়াক ওরফে রাব্বিকে আজীবন বহিষ্কার করাসহ নিহতের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি পাঁচ দফা দাবি জানান তারা।দাবিগুলো হলো, সুষ্ঠু এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার বাস্তবায়ন, অভিযুক্ত ও তার সহায়তাকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল, নিহতের পরিবারকে যথাযত ক্ষতিপূরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে তদারকি করতে হবে যেন কেউ মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে।

মানববন্ধনে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কায়েস আহমেদ বলেন, রিক্তার স্বামী রিক্তাকে আমাদের সাথে মিশতে দিত না। এই জন্য ডিপার্টমেন্টে তার কোনো কাছের বন্ধু নেই। রাব্বি রিক্তার কাছে এক লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছিল যেটা না দেওয়ায় তাকে শারিরীক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হতো।

তিনি আরও বলেন, আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং যাবতীয় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ধরে নিতে পারি এটা একটা পরিকল্পিত হত্যা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি আছে, আমারা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচার, অভিযুক্ত রাব্বির ছাত্রত্ব বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, মামালা দ্রুত নিষ্পত্তি এবং ভিকটিমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মানববন্ধনে আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আরিফুল কবীর বলেন, আমাদের বোনকে মেরে, আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাই বিশ্বাস করে আইনী প্রক্রিয়া জটিল। একারণে বিচারে দেরি হয়। আমরা আইনের শিক্ষার্থী। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার হোক। এ বিচারটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক। যাতে ভবিষ্যতে আমাদের কোন বোনের সাথে কেউ এরকম জঘন্য কাজ করতে না পারে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক মোব্বারাহ সিদ্দিকা বলেন, আমি যদি ধরেও নেয়, মেয়েটা দোষী। সে হয়তো খারাপ চরিত্রের ছিল, তাহলে কি স্বামীর অধিকার জন্মায় তাকে হত্যা করার? এটা হতে পারে না। মেয়েটি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় আসার পর একটা মেয়ের এভাবে ঝড়ে যাওয়া কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, সুস্পষ্ট ভাবে আমরা বলে দিতে চাই, এটি কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে বোঝা যায় এটি একটি হত্যাকাণ্ড। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মধ্য দিয়ে দোষীদের সবোর্চ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক।

আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান হাবীবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আক্তার বানু, অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন, অধ্যাপক আবদুল হান্নান প্রমুখ। এসময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, রিক্তা আক্তার (২১) অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় স্বামীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে নগরীর ধরমপুরে অবস্থিত ভাড়া বাসা থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরে মেয়ের বাবা লিয়াকত আলী জোয়ারদার বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।