Home সারাদেশ রাজশাহীতে গাছের ডাল কেটে পাখির আবাসস্থল নষ্ট করলেন টিটিআই অধ্যক্ষ

রাজশাহীতে গাছের ডাল কেটে পাখির আবাসস্থল নষ্ট করলেন টিটিআই অধ্যক্ষ

30

মো.পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী অফিস:
রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এ বণ্য পাখির আবাসস্থল নষ্ট করার জন্য গাছের ডাল কেটে ফেলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শওকত আলী খান।গত শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে শ্রমিক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছের ডাল কাটা হয়। এসময় যে সব ডালে পাখির বাসা ছিলো সেই সব ডাল গুলো কেটে পাখির বাসা ভেংগে ফেলা হয়।

শনিবার দুপুরে টিটিআই ভবনে গিয়ে দেখা যায় ৩/৪ জন গাছ কাটা শ্রমিক গাছের ডাল কাটছে আর সেই কাজের তদারকি করছে প্রতিষ্ঠানের গার্ড।গার্ডকে ডাল কাটার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,পাখিদের বাসা থাকার কারনে গাছের নিচে বেশি নোংরা হয় এবং দূর্গন্ধ ছড়ায় সেজন্যই যেসব ডালে পাখির বাসা আছে সে ডালগুলো কাটার জন্য অধ্যক্ষ মহোদয়ের হুকুমে কাটা হচ্ছে।টেন্ডার দিয়ে কাটা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেনি তিনি।সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় দেখা যায়,পাশের গ্যারেজে ৩/৪ টি বক জাতীয় পাখি জবাই করে রাখা আছে।পাখি গুলো জবাই করার কারন জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলে,গাছের ডাল কাটার সময় পাখিগুলো বাসা সহ নিচে পরে যায় তখন পাখিগুলোকে জবাই করা হয়েছে।গাছের ডাল কাটা শ্রমিকরা আরো জানায়,ডাল কাটা কাজটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারীর ছেলে নিজের খরচে গাছের ডাল কেটে ডালগুলো নিচ্ছে।

এবিষয় নিয়ে রবিবার অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য কয়েকটি গাছের ডাল কাটা হয়েছে। বনবিভাগের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা গাছ কাটিনি ডাল কেটেছি তাই লিখিত অনুমতি নিইনি।

পাখিদের আবাসস্থল নষ্ট করার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে অনেক গাছে পাখিরা বাস করে এখানে বাস করার জন্য সমস্যা হচ্ছিল বিধায় ডাল কাটা হয়েছে। তিনি শ্রমিকদের দেয়া তথ্য কে ভুল বলেন এমনকি তার প্রতিষ্ঠানে একজন মাত্র পরিচ্ছন্ন কর্মী হবার কারনে তাদের অনেক সমস্যা হয়।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা জন্য বন্যপ্রাণী/পাখিদের শিকার করা বা হত্যা করা আইনত দন্ডনিয় অপরাধ। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৮(১) অনুচ্ছেদে লিখা আছে কোন ব্যাক্তি বন্য প্রাণী হত্যা করা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ১ বছরের কারাদণ্ড।

টিটিআই এর গাছের ডাল কাটার বিষয় বন বিভাগের পরিদর্শকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পরিদর্শক বলেন,ছুটির দিনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না পরবর্তীতে রবিবারে পুনরায় তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,টিটিআই এর অধ্যক্ষের সাথে বন বিভাগের কর্মকর্তার কথা হয়েছে তবে কি কথা হয়েছে তা বলতে পারেননি। তবে বনবিভাগের কর্মর্কতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন কোন প্রতিষ্ঠান গাছ কাটতে চাইলে বনবিভাগ শুধু মুল্য নির্ধারন করে দেয় তবে টিটিআই এর বিষয় নিয়ে তিনি অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

পাখিদের আবাসস্থল নষ্ট করা,গাছের ডাল কাটা ও পাখি হত্যা করার বিষয়ে “সেভ দ্যা ন্যাচার এন্ড লাইফ ”এর চেয়ারম্যান বলেন,বন্যপ্রাণী হত্যা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এটা যে করেছে সে নিঃসন্দেহে অপরাধ করেছে।

রাজশাহীর শহরের বিভিন্ন অনিয়ম ও সমস্য সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনাব জামাত খান। তিনি গাছের ডাল কাটা পাখিদের আবাসস্থল নষ্ট ও পাখি হত্যার তিব্র নিন্দা জানান সেই সাথে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে বলেন এমন অপরাধ মূলক কাজ যদি বন্ধ না হয় তাহলে আমরা সামাজিক সংগঠন গুলো আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন পাস করা হয়।কিন্তু নিজেদের সুবিধার জন্য আইন অমান্য করে বন্য প্রাণী হত্যা ও গাছের ডাল কেটে গাছকে নষ্টের দিকে ঠেলে দেয়া কতটা যৌক্তিক তা সুশীল সমাজের কাছে জবাব বিহীন প্রশ্ন।