Home খেলা ম্যাজিকম্যানের হাতেই বিশ্বকাপ

ম্যাজিকম্যানের হাতেই বিশ্বকাপ

এক রূপকথার অনন্য সমাপ্তি:

138

যুগবার্তা ডেস্ক ।। এক রূপকথার অনন্য সমাপ্তি। প্রায় চার দশকের স্বপ্ন। ৩৬ বছরের স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়। জাদুর পর জাদুতে বিশ্বকাপ এখন ম্যাজিকম্যানের হাতে। সারা বিশ্বের বিষ্য়কর সেই জাদুকর হলেন লিওয়েন মেসি। যিনি কেবল আর্জেন্টিনাইনদের’ই নয়, বিশ্ববাসীকে স্বপ্ন দেখিয়ে চার দশকের সে স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণও করলেন। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে শ্বাসরোধী ম্যাচে ৮০ হাজার দর্শক যেমন মেসি জাদু দেখেছেন, তেমনি দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষও তা উপভোগ করেছেন টেলিভিশন ও বড় পর্দায়। তবে এমবাপ্পেও তার সেরাটা দিয়েছেন। ফ্রান্স বিজয়ী হলে তিনিই হতেন মহাকাব্যের রাজপুত্র। কিন্তু আর্জেন্টাইন গোলকিপার মার্টিনেজ সর্বশক্তি দিয়ে শেষ বেলায় এমবাপ্পেকে মহাকাব্যের দুঃখী রাজপুত্র বানিয়েছেন।

গতকালের খেলায় শক্তির বিচারে তুল্যমূল্য ছিলো ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা। আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল টক্কর হবে সমানে সমানে। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচ মাঠে গড়াতেই মেসি, আলভারেজ, ফার্নান্দেজ, দি মারিয়ারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। পুরো হাফ-টাইম আর্জেন্টিনার অবাধ দাপট। ঠিক যেন একপেশে খেলা!ফ্রান্সকে পুরো নাকানিচোবানি খাইয়ে ছেড়েছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির পেনাল্টি ও দি মারিয়ার গোলে ২-০ এগিয়ে যায় লা অ্যালবেসেলেস্তেরা।
প্রথমার্ধের ২২ মিনিটে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।
মেসি হুগো লরিসকে উল্টো দিকে ফেলে আর্জেন্টিনাকে ১-০ এগিয়ে দেন। চরম আত্মবিশ্বাসে খেলে ম্যাচের ৩৭ মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটা করেন আরেক জাদুকর দি মারিয়া। গোলের পথটা মসৃণ করেছিলেন মেসি’ই। তিনি চকিতে টাচে বলটা দেন আলভারেজকে। তাতেই ফ্রান্সের ফুটবলাররা কেটে যায়। আলভারেজ বল বাড়িয়ে দেন ম্যাক অ্যালিস্টারকে। সামনে পুরোপুরি ফাঁকা জমি। ম্যাক অ্যালিস্টার কিছুটা বল নিয়ে এগিয়ে, ডি মারিয়াকে বল দেন। বাঁ পায়ের প্লেসমেন্টে বল জালে জড়িয়ে দেন। ২-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পুরো ৪০ মিনিট আর্জেন্টিনা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফ্রান্স কার্যত খেলতে পারেন নি। শেষ পাঁচ মিনিটে কিছুটা চেষ্টা করে ম্যাচে ফেরার। কিন্তু ফ্রান্সকে প্রথম ৪৫ মিনিটে টেকনিক্যালি ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা।

একপেশে খেলা দেখে বিশ্ববাসী ভেবেছিলেন আর্জেন্টিনা ব্যবধান আরো বাড়াবে। একই ছন্দেই দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। চার-পাঁচটা টাচে আক্রমণে উঠে যাচ্ছিল। গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল কয়েকটা। গ্রিজম্যান ছন্দে না থাকায় ফ্রান্স খেলতে পারছিল না। এমবাপেরও সাপোর্ট পেতে অসুবিধে হচ্ছিল। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দেশঁ। ফ্রান্স কয়েকটা পরিবর্তন আনেন দলে। প্রথমার্ধে মার্কাস থুরাম ও মুয়ানিকে নামানোর পর দ্বিতীয়ার্ধে দেশঁ একইসঙ্গে দু’টি পরিবর্তন করেন। কামাভিঙ্গার সঙ্গে নামিয়ে দেন কিংসলে কোম্যানকে।
এই দু’টি পরিবর্তনে খেলা ঘোরে। আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি ডি মারিয়াকে তুলতেই ফ্রান্স ঘুরে দাঁড়ায়। স্বমহিমায় ফেরেনি এমবাপে মুয়ানিকে আটকাতে গিয়ে বক্সে ফাউল করেন ওটামেন্ডি। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। স্পটকিক থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন এমবাপে। এরপর কোম্যান মেসির কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে ডানদিক বরাবর বল নিয়ে উঠে থুরামকে দেন। থুরামের কাছে এমবাপে পেতেই চলতি বলেই শট নেন। বল জালে। দু’টি মাটি ঘেঁষা শটে গোল করলেন এমবাপে। বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি হতে চলেছেন মেসির উত্তরসুরি। শেষ দিকে মেসির একটি দুর্ধর্ষ শট বাঁচিয়ে দেন লরিস।
ম্যাচের প্রথম অতিরিক্ত সময়ে আর কোনো গোল হয় নি। দ্বিতীয় অতিরিক্ত সময়ে ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে যায় ফের আর্জেন্টিনা। মেসি সুন্দর ফলো আপে গোলটি দেয়। এই গোলই জয়সূচক হবে বলে যখন ভাবা হচ্ছে তখনই ফের মোচড়। মন্টিয়েলের হাতে বল লাগায় ফ্রান্স পেনাল্টি পায়। এমবাপে হ্যাটট্রিক করে ফ্রান্সকে সমতা ফেরান। ফাইনালে হ্যাটট্রিক বিরল। তারপরেও জয় পেয়ে যেতে পারত ফ্রান্স। যদি না এমি মার্টিনেজ দুর্ধর্ষ সেভ না করতেন। মুয়ানির শট এগিয়ে এসে পা লম্বা করে রুখে দেন।

এরপর টাইব্রেকারে যায় ম্যাচ। টাইব্রেকারে মন্টিয়েল গোল করতেই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা ত্রাতা হলেন মেসি নন, এমি মার্টিনেজ। ফ্রান্সের প্রথম শটই তিনি বাঁচিয়ে দেন। কিংসলে কোম্যানের শট বাঁচিয়ে দেন। আর্জেন্টিনার সব শটই গোলে যায়। ঠিক যেভাবে এক মাসের বিশ্বকাপ শেষ হবার কথা ছিল, শিহরণ জাগিয়েই মুকুট মাথায় জয়ী হলো মেসির দেশ। ১৯৮৬ তে স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন ফুটবলের কিংবদন্তী ম্যারাডোনা। ৩৬ বছর পর সেই স্বপ্ন জয় করলেন ম্যাজিকম্যান লিওয়েন মেসি।