Home জাতীয় ‘মুচি’ নয়, এখন থেকে নতুন পরিচয় হোক ‘সু-কর্মী’

‘মুচি’ নয়, এখন থেকে নতুন পরিচয় হোক ‘সু-কর্মী’

35

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি: যারা জুতো তৈরি, সেলাই ও কালি বা রঙ করার কাজ করেন তারা আমাদের সমাজে ‘মুচি’ হিসেবে পরিচিত। দলিত সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র পেশার এসব হতদরিদ্র ও অবহেলিত ‘সু-কর্মী’রা আমাদের ঘুণে ধরা সমাজে অবহেলার পাত্র। এমনকি এদেরকে কেউ মানুষ বলে গণ্য করতে চান না। অথচ এরাই আমাদের চলার পথে সৌন্দর্যের সিঁড়ি তৈরি করে দেন। এরা পথিকজনের সহায়। এখন থেকে এরা ‘মুচি’ নয়, পরিচিত হবেন ‘সু-কর্মী’ (Shoe Craftsman) হিসেবে। এসব ‘সু-কর্মী’দের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ‘ভিনগোলার্ধ’ নামক সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বরিশালের বানারীপাড়ার শেরেবাংলার পিতৃভূমি চাখারের কৃতি সন্তান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)’র সাবেক ডিন এবং বাইশারীর সৈয়দ বজলুল হক ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল আলোর দিশারী অগ্রপথিক। ‘সু-কর্মী’র সাইনগুলো ইতোমধ্যে তারা পৌঁছে দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকার ‘সু-কর্মী’দের হাতে। কাজ চলছে আরো বিতরণের। ২০শে আগস্ট-২০২১ থেকে রাজধানী ঢাকা শহরে তারা ‘সু-কর্মী’র সাইনগুলো বিতরণ করা শুরু করেছেন। প্রথম পর্বে সাইনগুলো পৌঁছে দিয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৫ জন ‘সু-কর্মী’র কাছে। পরের পর্বটি মিরপুরে। মিরপুর-১৩ এর শ্রীচরণ ঋষি এ সাইনগুলো গুরুত্বের সাথে ব্যবহার করছেন। সবাই এর মতো সাইনগুলো ব্যবহারে করলে উদ্যোগতাদের উদ্দেশ্য সার্থক হবে। ঢাকার বাইরে প্রথমে বরগুনা শহরে ১৭ অক্টোবর-২০২১ তারিখে ১১ জন ‘সু-কর্মী’র কাছে সাইনগুলো দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ‘সু-কর্মী’দের কাছে সাইনগুলো পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কাজ চলছে। এদের মধ্যে রাজশাহী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, ফেনী, হাতিয়া, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা ও বাগেরহাটের কিছু কিছু এলাকায় ‘সু-কর্মী’র সাইনগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভারতের পশ্চিম বাংলায়ও এ কাজটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাইশারী সৈয়দ বজলুল হক কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রয়াত সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জাকিরের ছোট ভাই প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আতিকুল ইসলাম জানান, আমরা ‘মুচি’ শব্দটিকে বদলে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ‘সু-কর্মী’রা সকলেই আমাদের এ সাইনগুলোকে আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করেছে। এভাবে ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলাদেশে কাজ করতে চাই। আমরা চাচ্ছি এদের কাজকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখুক। এদের সন্তানেরা গর্ব করে বাবার পরিচয় দিতে পারুক এটাই আমাদের কাম্য। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি সামাজিক উদ্যোগ। আশা করি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেকেই আমাদের সাথে কাজ করতে এগিয়ে আসবে। এ ব্যাপারে সচেতন সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা চাই ‘মুচি’ সম্বোধনটি আমাদের সমাজ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাক। সমাজে এরা নতুন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক। এখন থেকে এদের নতুন পরিচয় হোক ‘সু-কর্মী’ (Shoe Craftsman)।