Home রাজনীতি মানুষের অন্নের স্বাধীনতা দাবি করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: সেলিম

মানুষের অন্নের স্বাধীনতা দাবি করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: সেলিম

29

ঢাকায় গার্মেন্ট টিইউসি’র শ্রমিক সমাবেশ

স্টাফ রিপোটার: ঈদের আগে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধের দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি জননেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, খাদ্যসহ মানুষের মৌলিক অধিকারের দাবিতে কথা বলাই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনা। মানুষের অন্নের স্বাধীনতা দাবি করাই ন্যায় সঙ্গত। যারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় নিরন্ন মানুষের প্রতিবাদের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তারা স্বৈরাচারী শাসকের দোসর। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই মানুষের ভাতের অধিকার আদায় করতে হবে। তিনি অবিলম্বে গার্মেন্ট শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান।
২০ রোজার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস ও এপ্রিল মাসের অর্ধেক মজুরিসহ সকল বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আজ ৭ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ থেকে কাল বিলম্ব না করে গার্মেন্ট শ্রমিদের মজুরি বৃদ্ধি এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি অ্যাড. মন্টু ঘোষ এর সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গার্মেন্ট টিইউসির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল সাহা, মঞ্জুর মঈন, আজিজুল ইসলাম, আব্দুস সালাম বাবুল, বৃহত্তর উত্তরা আঞ্চলিক কমিটির নেতা মোহাম্মদ শান্ত, নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতা জোৎ¯œা আক্তার প্রমুখ।
সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, প্রায় চার বছর আগে বাজার পরিস্থিতি ও শ্রমিকপক্ষের দাবি উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নি¤œতম সমুদয় মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতির হার সম্পর্কে সরকারি বয়ান অনুসারেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমান বাজারে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নীরব দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অতীতের সকল নজির অতিক্রম করেছে। শ্রমিকের জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ হিসেবেই সরকারকে অবিলম্বে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ রপ্তানী করেও সর্বনি¤œ মজুরি পাওয়া শ্রমিকরা আজ তিল পরিমান মাসিক আয় নিয়ে সাগর সমান জীবন ব্যয়-এর মুখোমুখি অসহায় দাড়িয়ে আছে। বিস্ফোরণের পূর্বেই সরকার মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে তা সব পক্ষের জন্যই ভালো হবে। তিনি অবিলম্বে গার্মেন্ট শ্রমিকের নি¤œতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, দেশে সবচেয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন গার্মেন্ট মালিকরা কিন্তু শ্রমিকদের পাওনার কথা আসলে তারাই সবচেয়ে বিত্তহীন হয়ে যান। অথচ মালিকরা কেনা-কাটা ও ঈদ উদযাপনের জন্য কানাডা-আমেরিকা-মালয়েশিয়ায় পারি জমান। প্রতি বছর ঈদ উৎসবের সময় গার্মেন্ট শ্রমিকরা উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বলেন, ২০ রোজার মধ্যে চলতি মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা না হলে ঈদের আগে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বেসিকের সমান বোনাসের দাবি অন্যান্য বছরের মত এবারও যদি সর্বত্র উপেক্ষিত হয় তাহলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। সংকট সৃষ্টির পূর্বেই তিনি সরকারি সংস্থাসমূহকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন এবং নতুন মজুরি হার ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত শ্রমিকদের মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় বাজেটে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আবাসান, রেশনিং ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, যে শ্রমিকদের উদয়অস্ত শ্রমে আর অবদানে দেশের অর্থনীতি সচল আছে তাদের জন্য আজ পর্যন্ত কোনদিন বাজেটে পৃথক বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ মালিকরা যেকোন অযুহাতে কর রেয়াত, শুল্ক অবকাশসহ সকল প্রণোদনা ভোগ করে থাকেন।
সমাবেশে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল-২০২৩ বিরোধীতা করে বক্তারা বলেন, বিলটি শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকার ও সার্বজনীন মানবাধিকার লঙ্ঘণ করবে। সমাবেশে থেকে রানা প্লাজা শ্রমিক হত্যাকান্ডের বিচারের ইচ্ছাকৃত দীর্ঘ্যসুত্রিতার প্রতিবাদ এবং ভবন মালিক সোহেল রানার জামিনে উদ্বেগ জানানো হয়।